নারীদেহে মেনোপজ স্বাস্থ্য সচেতনতার এক নতুন সূচনা

নারীদেহে মেনোপজ  স্বাস্থ্য সচেতনতার এক নতুন সূচনা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

হরমোন, হৃদরোগ, হাড়ক্ষয় ও মানসিক স্বাস্থ্য—ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর নারীর জন্য যে পরিবর্তনগুলো জানা অত্যাবশ্যক।নারীর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যপর্যায় হলো মেনোপজ, অর্থাৎ ঋতুস্রাব স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া। এটি বয়সজনিত প্রাকৃতিক পরিবর্তন হলেও, এই সময় শরীরে এমন সব জটিল রূপান্তর ঘটে যা হৃদরোগ, হাড়ক্ষয়, মানসিক স্বাস্থ্য এমনকি কিছু ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে।

বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে মেনোপজ-পরবর্তী স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা এখনও আশঙ্কাজনকভাবে কম। নারীদের বড় অংশই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না নিয়ে নীরব কষ্টে দিন কাটান। অথচ, সঠিক জ্ঞান, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সময়টিকে করে তোলা যায় অনেক বেশি সুস্থ ও আত্মবিশ্বাসময়।
 

মেনোপজ কীভাবে ঘটে ??

মেনোপজ তখনই হয় যখন ডিম্বাশয় (ovary) ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমিয়ে আনে। এটি সাধারণত ঘটে ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে। তবে যদি ৪০-এর আগেই মেনোপজ ঘটে, সেটিকে বলা হয় Premature Menopause, যা গর্ভধারণ ও হরমোন ভারসাম্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে।

ইস্ট্রোজেন হরমোন শরীরে বহু কাজ নিয়ন্ত্রণ করে—শুধু প্রজনন নয়, বরং হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখা, হৃদযন্ত্র সুরক্ষা, ত্বক ও ব্রেন ফাংশনও এর আওতায় পড়ে।
 

মেনোপজ-পরবর্তী বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি কী কী?

১. হাড়ক্ষয় (Osteoporosis): ইস্ট্রোজেন কমে যাওয়ার ফলে ক্যালসিয়াম শোষণ কমে যায়, হাড় পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ➡ প্রতিকার: ক্যালসিয়াম-ভিটামিন ডি গ্রহণ, ওজনবহনকারী ব্যায়াম, চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যালসিটোনিন বা হরমোন থেরাপি।

২. হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি: মেনোপজের পর নারীদের মধ্যে LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) বাড়ে এবং HDL (ভালো কোলেস্টেরল) কমে। ➡ প্রতিকার: হৃদবান্ধব খাদ্য, ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ ও সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা।

মেটাবলিক সিনড্রোম ও ডায়াবেটিস: এই সময় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়তে পারে, যার ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে।

৩. স্তন ক্যানসার ও ইউটেরাইন ক্যানসারের ঝুঁকি: পর্যবেক্ষণ ও স্ক্রিনিংয়ের ঘাটতির কারণে অনেক নারী প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারেন না।

 

মানসিক ও নারীবন্ধন সংক্রান্ত প্রভাব-

⇨ মেনোপজ মানেই শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও বড় পরিবর্তনের সময়।

⇨মেজাজের ওঠানামা

⇨ঘুমের ব্যাঘাত

⇨বিষণ্নতা, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি

⇨যৌন আগ্রহ কমে যাওয়া
 

✔ সমাধান: পারিবারিক সহানুভূতি, মানসিক সাপোর্ট থেরাপি, ও প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে হরমোন থেরাপি।
 

Hormone Replacement Therapy (HRT): প্রয়োজন হলে, নির্ভরযোগ্য চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে-

HRT ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের ঘাটতি পূরণ করে, হট ফ্ল্যাশ, হাড়ক্ষয় ও মেজাজ পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে HRT কিছু ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসার ও হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। তাই এটি অবশ্যই পারসোনালাইজড মেডিকেল অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে নিতে হবে।

 

কি করণীয় এই সময়টিকে সুস্থভাবে পার করার জন্য?

✪ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:

⇨ফলমূল, শাকসবজি ও আয়রন-ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

⇨নিয়মিত ওজনবহনকারী ব্যায়াম (যেমন হাঁটা, হালকা জগিং, ইয়োগা)

⇨ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তির চর্চা

 

✪  চিকিৎসা সহায়তা:

⇨হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা (DEXA স্ক্যান)

⇨লিপিড প্রোফাইল, রক্তচাপ, সুগার চেক

⇨স্তন ও জরায়ু সংক্রান্ত রুটিন স্ক্রিনিং

 

✪ মানসিক স্বাস্থ্য:

পরিবার ও বন্ধুদের সাথে খোলামেলা আলোচনা

প্রয়োজনে কাউন্সেলিং ও থেরাপি গ্রহণ
 

মেনোপজ কোনো "শেষ" নয়—এটি নারীর জীবনের আরেকটি ধাপ, যেখানে যত্ন ও সচেতনতা থাকলে জীবন হতে পারে অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী।

মেনোপজ নিয়ে লজ্জা, ভয় বা চুপচাপ সহ্য করার দিন শেষ। প্রতিটি নারী অধিকার রাখে সঠিক তথ্য, চিকিৎসা ও মর্যাদা পাওয়ার। জীবন বদলায়, দেহ বদলায়—but জানলে, বুঝলে ও দেখভাল করলে—নারীর শক্তি কখনো কমে না।


সম্পর্কিত নিউজ