কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পাল্টে যাচ্ছে শেখার সংজ্ঞা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পাল্টে যাচ্ছে শেখার সংজ্ঞা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিশ্ব যখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চূড়ান্ত পর্বে প্রবেশ করছে, তখন শিক্ষা খাতেও ঘটছে এক মৌলিক রূপান্তর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI এখন আর শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত টুল নয়, এটি হয়ে উঠেছে ভবিষ্যতের শ্রেণিকক্ষের চালিকাশক্তি। পাঠ্যবই, ব্ল্যাকবোর্ড বা লেকচার নির্ভরতা পেছনে ফেলে এখন শিক্ষার্থীদের শেখার সঙ্গী হয়ে উঠছে এলগরিদম, ডেটা ও বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সফটওয়্যার।

বিশ্বের অগ্রগামী দেশগুলোতে এখন 'ডেটা-ড্রিভেন লার্নিং' বা ডেটা-ভিত্তিক শেখার মডেল চালু হচ্ছে। শিক্ষার্থীর বয়স, মনোযোগের সময়কাল, শেখার গতি, আগ্রহের ক্ষেত্র এমনকি মানসিক চাপ পর্যবেক্ষণ করে AI প্ল্যাটফর্ম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে—কোন পদ্ধতিতে তাকে শেখালে সবচেয়ে কার্যকর হবে। এতে করে পাঠদান হচ্ছে 'ব্যক্তিকেন্দ্রিক', আর তা শিক্ষার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ধাপ।

বিশ্ব ব্যাংক ও UNESCO-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে অন্তত ৪০টিরও বেশি দেশ তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় AI প্রযুক্তিকে একীকরণ করেছে বা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে। বিশেষ করে STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) শিক্ষা খাতে AI অ্যানালিটিক্স ব্যবহারে শিক্ষার্থীর পারফরম্যান্স শতকরা ২০%-২৫% পর্যন্ত উন্নত হয়েছে বলে পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২৫-এর খসড়া সংস্করণে AI-সমর্থিত ডিজিটাল লার্নিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরির প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো AI-চালিত অনলাইন মূল্যায়ন, অটোমেটেড অ্যাসাইনমেন্ট চেকিং এবং ভার্চুয়াল টিউটর সিস্টেম চালুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে।
 

তবে এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। 

☞  ডিজিটাল বিভাজন: বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ শিক্ষার্থী এখনো ইন্টারনেট সংযোগ ও আধুনিক ডিভাইসের বাইরে রয়ে গেছে।

☞  গোপনীয়তা ও তথ্যনিরাপত্তা: শিক্ষার্থীদের পারসোনাল ডেটা ব্যবহারে স্পষ্ট নীতিমালা না থাকলে ভবিষ্যতে তা উদ্বেগজনক হতে পারে।

☞  শিক্ষকের ভূমিকা: শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন। কারণ, AI সহায়ক হলেও মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সমন্বয় শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে মানুষের বিকল্প হতে পারে না।

 

বিশ্বজুড়ে ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর জাতীয় পর্যায়ে 'AI-ক্যুরেটেড কারিকুলাম' চালু করেছে, যা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে একক 'লার্নিং প্রোফাইল' অনুযায়ী পাঠদান নিশ্চিত করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষা এখন আর 'একই পাঠ সকলের জন্য' এই মডেলে আটকে নেই। বরং প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা প্রবেশ করছি 'ক্লাসরুম বাইন্ডারির বাইরে' এক নতুন যুগে—যেখানে শেখার উৎস শুধু শিক্ষক নন, বরং বৈশ্বিক তথ্যভাণ্ডার, ইন্টেলিজেন্ট সফটওয়্যার ও রিয়েল-টাইম ফিডব্যাক মডেল।
 

AI যদি পরিকল্পিতভাবে, ন্যায্য প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে এবং শিক্ষকের বিকল্প না হয়ে তাদের শক্তিশালী সহকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়—তবে এই প্রযুক্তি হতে পারে একটি নতুন শিক্ষাযুগের ভিত্তিপ্রস্তর। শিক্ষা তখন হয়ে উঠবে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক, গতিশীল ও প্রস্তুত আগামী পৃথিবীর জন্য।


সম্পর্কিত নিউজ