ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস কি নিরীহ নাকি ক্ষতির ঘরবাড়ি?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ত্বকের নানা সমস্যা নিয়ে আমরা প্রায়ই অস্থির হয়ে উঠি। তার মধ্যে ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস যেন একটি নীরব বিভ্রাট—যা না চাইলেও ঘরে বাইরে উঁকি দেয়। চোখে দেখা যায় না, কিন্তু প্রভাব ফেলে আত্মবিশ্বাসে।
ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস—অনেকের চোখে ছোটখাটো 'বিউটি ইস্যু', কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যাকে অবহেলা করলে ত্বকের গভীরে জন্ম নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা।
একটা সাধারণ ভুল ধারণা হলো—'ওগুলো তো নখ দিয়ে তুলে ফেললেই হয়!' কিন্তু বাস্তবে এই ছোট ভুল থেকেই সৃষ্টি হতে পারে সংক্রমণ, ত্বকের স্থায়ী ক্ষত, এমনকি ত্বকের বার্ধক্য ত্বরান্বিত হওয়ার আশঙ্কাও।
ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস: বাইরের নয়, ভিতরের সংকেত
ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস শুধু ত্বকের বাইরের সমস্যা নয়। এগুলো শরীরের হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা, অতিরিক্ত সেবাম নিঃসরণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ও ত্বকের সঠিক ক্লিনজিং না করার লক্ষণ হিসেবেও প্রকাশ পায়। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্কদের হরমোনের ওঠানামায় এই সমস্যা বাড়ে।
➤ ব্ল্যাকহেডস: লোমকূপ খোলা থাকে এবং ত্বকের তেল ও মৃত কোষ বাতাসে অক্সিডাইজ হয়ে কালো রঙ ধারণ করে।
➤ হোয়াইটহেডস: লোমকূপ বন্ধ থাকে, ভিতরে আটকে থাকে তেল ও কোষের স্তর। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও এটি সংক্রমণের উৎস হতে পারে।
বাড়িতে তুলে ফেলার প্রবণতা: বিপদ ঘনিয়ে আসে নীরবে
ব্ল্যাকহেডস-হোয়াইটহেডস তুলতে গিয়ে অনেকে ব্যবহার করেন নখ, পিন, ব্ল্যাকহেড রিমুভার স্ট্রিপ, বা স্ক্র্যাব। কিন্তু...
⇨ এতে লোমকূপের চারপাশে টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
⇨ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে তৈরি হতে পারে ফোড়া বা সিস্ট।
⇨ ভুল টেকনিক বা শক্ত চাপ প্রয়োগ করলে লোমকূপ স্থায়ীভাবে প্রশস্ত হয়ে যায়।
⇨অতিরিক্ত ঘষামাজার ফলে ত্বক হয়ে পড়ে পিগমেন্টেড বা অমসৃণ।
কেন চিকিৎসকের শরণ নেওয়া জরুরি?
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে ত্বক পরীক্ষা করলে বোঝা যায় আসল কারণ—তেলগ্রন্থির অতিসক্রিয়তা, হরমোন সমস্যা, কিংবা দেহে জিঙ্ক বা ভিটামিন এ-এর ঘাটতি। তারা রোগীর ত্বক অনুযায়ী প্রয়োগ করেন:
⇨ক্লিনিক্যাল এক্সট্রাকশন (ব্যাকটেরিয়ামুক্ত পদ্ধতিতে ব্ল্যাকহেডস তুলা)।
⇨কেমিক্যাল পিলস (যেমন স্যালিসিলিক বা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড)।
⇨রেটিনয়েড বেইজড থেরাপি।
⇨ LED বা ব্লু-লাইট থেরাপি, যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে সহায়ক।
এসব চিকিৎসা শুধু চেহারার সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নয়, বরং ত্বকের গভীর সুস্থতাকেও নিশ্চিত করে।
খাদ্যাভ্যাস ও ঘুমের প্রভাব ত্বকে পড়ে ঠিকই
আপনি যদি প্রতিদিন চর্বিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত ডেইরি বা চিনি গ্রহণ করেন—তা সরাসরি সিবাম উৎপাদন বাড়িয়ে ব্ল্যাকহেডস/হোয়াইটহেডস বাড়াতে পারে। আবার ঘুমের ঘাটতি বা মানসিক চাপও ত্বকের ইনফ্লেমেটরি প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে।
ভুল পণ্যের ব্যবহারে বিপর্যয়: "অয়েল-ফ্রি" নামক অনেক প্রসাধনীও পোরস ব্লক করতে পারে, যদি না সেটা নন-কমেডোজেনিক হয়। আবার যেসব স্ক্রাবে থাকে বড় দানাদার উপাদান (যেমন অ্যাপ্রিকট স্ক্রাব), সেগুলো ত্বকের ক্ষুদ্র কাটা তৈরি করে ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশদ্বার খুলে দেয়।
সতর্কতাই সুরক্ষা: কী করবেন, কী করবেন না
➤ করুন:
⇨প্রতিদিন হালকা ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন
⇨সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন (UV রে ত্বকের অবস্থা আরও খারাপ করে)
⇨হাইড্রেটেড থাকুন, পর্যাপ্ত পানি পান করুন
⇨নন-কমেডোজেনিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
➤ করবেন না:
⇨ ব্ল্যাকহেড রিমুভিং স্ট্রিপ বারবার ব্যবহার
⇨ নখ বা পিন দিয়ে খোঁচানো
⇨ সোশ্যাল মিডিয়ার "ডিও-ইট-ইউরসেল্ফ" ভিডিও দেখে চিকিৎসা
ত্বক যতটা বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতীক, তার চেয়ে অনেক বেশি অন্তর্গত স্বাস্থ্যের প্রতিচ্ছবি। ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডসকে হালকাভাবে না নিয়ে, তাদেরকে বিবেচনা করুন ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ত্বকজটিলতার অগ্রদূত হিসেবে। চিকিৎসকের পরামর্শই হতে পারে এই নীরব শত্রুকে জয় করার সবচেয়ে বিজ্ঞ উপায়।