নক্ষত্র শনাক্ত থেকে মহাবিশ্ব বিশ্লেষণ—জ্যোতির্বিজ্ঞানে AI-এর নীরব বিপ্লব!!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
সময়টা বদলেছে। আজ আর টেলিস্কোপে চোখ রেখে শুধু তারা গোনার যুগ নেই। এখন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্যালাক্সির গভীরতা মাপছেন, নতুন নক্ষত্র আবিষ্কার করছেন, এমনকি মহাবিশ্বের জন্ম ও পরিণতির হিসাবও করছেন—but not alone. এই বিশাল দায়িত্বে তাদের পাশে এখন এক অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)।
বিশ্বখ্যাত পর্যবেক্ষণ প্রকল্প Sloan Digital Sky Survey (SDSS), NASA-র Kepler ও TESS মিশনের বিশাল ডেটা-ভাণ্ডার—এসবই এত বিশাল যে সাধারণ কম্পিউটিং পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা প্রায় অসম্ভব। এখানে AI আসছে বিপ্লব ঘটাতে। ডিপ লার্নিং অ্যালগরিদম, নিউরাল নেটওয়ার্ক ও ক্লাস্টারিং টেকনিক ব্যবহার করে AI এখন এমন সব জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা শনাক্ত করতে পারছে, যেগুলো মানুষ হাজার বছরেও চোখে দেখতে পেত না।
নতুন নক্ষত্র খোঁজার গোপন সহকারী: AI
TESS ও Kepler মহাকাশযানের পাঠানো আলোর ক্ষীণতম পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে AI এখন অবধি হাজারেরও বেশি এক্সোপ্ল্যানেট শনাক্ত করেছে, যেগুলো আমাদের সৌরজগতের বাইরের। এমনকি ২০২৩ সালে AI নির্ভর একটি গবেষণায় শনাক্ত হয় Proxima Centauri নক্ষত্রের চারপাশে সম্ভাব্য নতুন এক গ্রহের অস্তিত্ব।
ব্ল্যাক হোল ও নিউট্রন স্টার: অদৃশ্য কাহিনির ব্যাখ্যা
AI-র সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্যগুলোর একটি হলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও রহস্যময় ঘটনা—ব্ল্যাক হোল মিথস্ক্রিয়া এবং নিউট্রন স্টার সংঘর্ষ বিশ্লেষণ। LIGO এবং Virgo মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্তকারী যন্ত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে AI এখন এতটাই দক্ষ যে, সেকেন্ডের মধ্যে একটি সিগন্যালের উৎস বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দিতে পারে—এটা কিসের ইঙ্গিত। এটি মানব গবেষণায় সময় বাঁচানোর পাশাপাশি সিদ্ধান্তগ্রহণে অভাবনীয় গতি এনেছে।
টেলিস্কোপ এখন চলে নিজেই—রাত জেগে অপেক্ষার দিন শেষ!
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে স্থাপিত 'রোবোটিক টেলিস্কোপ' এখন AI-ভিত্তিক। এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলমান—যখনই কোনও আকস্মিক ঘটনা ঘটে (যেমন সুপারনোভা বিস্ফোরণ বা গামা-রে ফ্ল্যাশ), তখন তাৎক্ষণিকভাবে অ্যালগরিদম সেই অঞ্চল পর্যবেক্ষণ শুরু করে ও ডেটা সংগ্রহ করে।
চিলির Atacama, আমেরিকার Hawaii, ও ভারতের হিমাচলে স্থাপিত কিছু রিমোট টেলিস্কোপ এখন পুরোপুরি AI নিয়ন্ত্রিত। এমনকি এরা রাতের মেঘপুঞ্জ হিসেব করে সিদ্ধান্ত নেয়—সেই রাতে কোন অংশে আকাশ দেখবে।
তথ্য বিশ্লেষণে অলৌকিক গতি
প্রতিদিন লক্ষ কোটি তথ্য আসে—আলোকমাত্রা, রেডিও ওয়েভ, ইনফ্রারেড ছবি, এক্স-রে ইমেজ। AI মডেল যেমন Convolutional Neural Networks (CNN) ব্যবহার করে এগুলোর প্রতিটিতে সূক্ষ্মতম পরিবর্তন খুঁজে বের করে। এক মুহূর্তে AI শনাক্ত করতে পারে, কোনো নক্ষত্রের আলোর মাত্রা হঠাৎ কমেছে কি না—যা হতে পারে নতুন গ্রহ আবিষ্কারের ইঙ্গিত।
AI-এর হাতে মহাবিশ্বের মানচিত্র তৈরির কাজ
AI এখন কেবল নক্ষত্র খুঁজছে না, বরং মহাবিশ্বের স্ট্রাকচারও তৈরি করছে। গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের বিন্যাস, ডার্ক ম্যাটারের গতিপথ, কসমিক ফিলামেন্টের গঠন—এসব বিশ্লেষণে AI ব্যবহার করে একধরনের "কসমিক লেন্সিং" টেকনিক, যা মহাকর্ষের কারণে বিকৃত আলোর পথ বিশ্লেষণ করে দেখতে চায়: মহাবিশ্বের অদৃশ্য বস্তুগুলো কোথায়, কীভাবে ছড়িয়ে আছে।
ভবিষ্যত কী বলছে?
NASA ও ESA ইতিমধ্যে আগামী দশকের AI-নির্ভর মহাকাশ মিশন পরিকল্পনা করছে, যেখানে মানুষ নয়, AI নিজেই পর্যবেক্ষণ করবে, সিদ্ধান্ত নেবে, এমনকি ভবিষ্যদ্বাণীও করবে। মানবজাতির পক্ষে যেখানে পৌঁছানো অসম্ভব, সেখানে পৌঁছাবে এই ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তা।
এক নতুন যুগের শুরু যুগ বদলেছে—আজ মানুষ শুধু আকাশ দেখে না, আকাশ বিশ্লেষণ করে। আর সেই বিশ্লেষণে তার পাশে রয়েছে এমন এক বুদ্ধিমত্তা, যাকে বানিয়েছে মানুষই—AI। এ এক দিগন্ত ছোঁয়ার গল্প, যেখানে অজানা আকাশ এখন একটু বেশি জানা, আর নক্ষত্র এখন কেবল জ্বলজ্বলে বিন্দু নয়—তাদের গল্প জানার প্রযুক্তিগত চাবিকাঠি এখন আমাদের হাতেই।