ডিজিটাল বিপ্লবের চালিকাশক্তি এখন অ্যাপ!

ডিজিটাল বিপ্লবের চালিকাশক্তি এখন অ্যাপ!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

এক সময় মোবাইল অ্যাপ মানেই ছিল বিদেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর একচ্ছত্র দখল। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন বাংলাদেশের মেধা ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট খাত হয়ে উঠেছে এক সুবিশাল কর্মসংস্থান ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্র। রাজধানী থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর, এমনকি উপজেলা পর্যায়েও গড়ে উঠছে অ্যাপভিত্তিক উদ্যোগ। এর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবহন—প্রায় প্রতিটি খাতে।

দেশীয় উদ্ভাবনে গ্রামীণ সেবা ডিজিটাল -

পূর্বে যেখানে সরকারি সেবা নিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হতো, এখন সেখানে নাগরিক সেবা মিলছে এক ক্লিকেই। 'MyGov' প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি স্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন কৃষকদের জন্য আবহাওয়া ও সারের দাম পূর্বাভাস দেওয়া অ্যাপ, শিক্ষার্থীদের জন্য রিমোট লার্নিং অ্যাপ, এমনকি মাইক্রোফাইন্যান্স পরিচালনার জন্যও বিশেষ অ্যাপ তৈরি করেছে। সবই স্থানীয় চাহিদা ও সমস্যার বাস্তব ভিত্তিতে তৈরি।
 

স্টার্টআপ বুম: তরুণদের প্রযুক্তিতে ঝুঁকে পড়া-
বাংলাদেশে প্রযুক্তিখাতে স্টার্টআপ প্রবাহ এখন অন্যতম আলোচিত বিষয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (ICT Division) এর 'স্টার্টআপ বাংলাদেশ' প্রকল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন বেসরকারি ইনকিউবেটর ও অ্যাক্সিলারেটর—সব মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে অ্যাপনির্ভর ব্যবসায়িক মডেল। তরুণরা এখন ফেসবুক স্ক্রল না করে নিজেরাই অ্যাপ নির্মাণে ঝুঁকছেন।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৫,০০০ এর বেশি অ্যাপ ডেভেলপার সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীও রয়েছেন। গার্মেন্টস নয়, এখন মেয়েরা কাজ করছেন কোডিং ল্যাবে।

 

আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মেও বাংলাদেশ-

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে, বিশেষ করে Upwork, Fiverr কিংবা Toptal-এ এখন বাংলাদেশি ডেভেলপারদের ডিমান্ড অনেক বেড়েছে। শুধু সাধারণ ইউজার অ্যাপ নয়, এন্টারপ্রাইজ-গ্রেড অ্যাপ যেমন POS সিস্টেম, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ, এবং স্বাস্থ্যসেবা ডেটা প্ল্যাটফর্মও এখন বাংলাদেশ থেকেই সরবরাহ হচ্ছে।

দেশের একাধিক অ্যাপ ইতিমধ্যেই গুগল প্লে স্টোরে মিলিয়ন ডাউনলোড ছুঁয়েছে। স্থানীয়ভাবে তৈরি শিক্ষা অ্যাপ যেমন ExamPrep বা কৃষিকাজ সহায়ক অ্যাপ যেমন KrishiTools বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি ডায়াসপোরার মাঝেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
 

প্রযুক্তি ও ভবিষ্যতের ধারা -

বর্তমানে অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), মেশিন লার্নিং, Augmented Reality (AR), এবং Blockchain ইন্টিগ্রেশন নিয়ে কাজ হচ্ছে। বিশেষ করে ফিনটেক খাতে এখন মোবাইল অ্যাপই ভবিষ্যতের লেনদেন ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। eKYC, লোন প্রসেসিং, ডিজিটাল ওয়ালেট—সব কিছুতেই 'স্মার্ট অ্যাপ্লিকেশন' যুক্ত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৫ সালেই দেশে অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ লাখের বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এই হার বজায় থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই খাত থেকে বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় সম্ভব বলে আশা করা হচ্ছে।
 

চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে- 

 তবে সব কিছুর মধ্যেই কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখনো অনেক শিক্ষার্থী কোয়ালিটি কোডিং শেখার সুযোগ পাচ্ছে না। নকল অ্যাপ, ইউজার ডেটা সিকিউরিটি, এবং মানসম্পন্ন ডিজাইন—এই তিনটি জায়গায় এখনো ঘাটতি রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরও ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়া সহযোগিতা দরকার।

বাংলাদেশে মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট খাত এখন আর কেবল প্রযুক্তির গল্প নয়—এটি একটি সম্ভাবনাময় বিপ্লব, যা পরিবর্তন আনছে কর্মসংস্থান, সেবাপ্রদান ও জীবনের প্রতিটি স্তরে।


যদি সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে আগামী দশকে বাংলাদেশ নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার অ্যাপ টেকনোলজি হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে—এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ