রাজশাহীতে ১ টাকায় রোগী দেখেন ৩ ডাক্তার বোন

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
এক অভাবনীয় মানবিক উদ্যোগে রাজশাহীতে সাড়া ফেলেছেন তিন বোন। মাত্র ১ (এক) টাকা ভিজিট নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল, ডা. আয়েশা সিদ্দিকা এবং ডা. ফারজানা মোজাম্মেল। সম্পর্কে তারা সহোদরা, আর তাদের এই দৃষ্টান্ত শুধু রাজশাহী নয়, পুরো দেশেই অনন্য!
২০২৩ সাল থেকে ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল ১ টাকায় রোগী দেখা শুরু করেন। একই বছর থেকে তার অন্য দুই বোনও এই মহৎ কাজে যুক্ত হন। তাদের দাবি, '১ টাকায় রোগী দেখার উদ্যোগটি তাদের বাবা মীর মোজাম্মেল আলীর'। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই তারা এমন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের পেছনের মূল অনুপ্রেরণা তাদের বাবা মীর মোজাম্মেল আলী। ডা. সুমাইয়া জানান, "এক টাকায় রোগী দেখার উদ্যোগটা বাবার। তার ইচ্ছেতেই রোগী দেখা শুরু করি। এটা এতোটা ভাইরাল হবে ভাবিনি। আমাদের তিন বোনকে এভাবেই গড়ে তুলেছেন বাবা।"
ডা. সুমাইয়া ২০২০ সালে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ২০২৩ সালে তিনি এই উদ্যোগ শুরু করেন। শুরুতে মেয়ের জন্য শিক্ষক বাবা মীর মোজাম্মেল আলী প্রচারপত্র বানিয়েছিলেন। এই প্রচারপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা দ্রুত ভাইরাল হয় এবং অসহায় দুস্থ রোগীরা সুমাইয়ার চেম্বারে চিকিৎসা নিতে আসতে শুরু করেন।
তার বোন ডা. আয়েশা সিদ্দিকা একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান, যিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেছেন। আরেক বোন ডা. ফারজানা মোজাম্মেল একজন ডেন্টিস্ট। নগরীর সাহেববাজার এলাকায় নিজ বাসার নিচেই চেম্বার তৈরি করে দুস্থ-অসহায় রোগীদের জন্য এই তিন ডাক্তার বোন পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রোগী না দেখার কারণ হিসেবে ডা. সুমাইয়া বলেন, তিনি কয়েকজনের সাথে মিলে করোনার সময় থেকে ‘দ্য ফাইভ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করছেন। এই সংগঠনটি মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা – খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে কাজ করে। যেহেতু তারা কোনো অনুদান পান না এবং নিজেদের আর্থিক সহায়তায় সবকিছু পরিচালনা করেন, তাই একটি প্রতীকী মূল্য হিসেবে ১ টাকা ভিজিট নেওয়া হয়।
ডা. সুমাইয়া বলেন, "আমি এখানে প্রাইমারি ট্রিটমেন্টটা দেই। জটিল কোনো সমস্যা হলে সে অনুযায়ী ডাক্তারদের কাছে রেফার্ড করি। আমি ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন নিয়মিতই চেম্বার করছি। সাধারণ মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা কোনো কিছুর বিনিময়ে কেনা সম্ভব না।"
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও এই সেবায় সন্তুষ্ট। ৩৫ বছর বয়সী শামীমা খাতুন জানান, তিনি সাত মাস ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং ভালো ফল পাচ্ছেন। ১৮ বছর বয়সী কলেজ ছাত্র রফিকুল ইসলাম দাঁতের চিকিৎসায় উপকার পেয়েছেন এবং ৪৫ বছর বয়সী নূর নাহার কোমর ব্যথার চিকিৎসায় কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছেন।
মেয়েদের এমন সেবায় গর্বিত বাবা মীর মোজাম্মেল আলী বলেন, "আমার তিনটা মেয়ে। মেয়েদেরকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পেরেছি। তারা আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে। আমি মানুষের জন্য কাজ করি। আমার মেয়েরাও কর্মজীবনে যাই করুক না কেন, তারা যেন অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে।"