বাংলাদেশে স্টার্টআপের নতুন অধ্যায়
তরুণদের প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগ দেশের অর্থনীতি ও সমাজে বয়ে আনছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গেই তরুণদের উদ্যম ও উদ্ভাবন বাংলাদেশে স্টার্টআপ সংস্কৃতিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে তরুণ উদ্যোক্তারা প্রযুক্তি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা দিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করছেন, যা দেশের অর্থনৈতিক মানচিত্র পাল্টে দিচ্ছে।
স্টার্টআপ শব্দের মধ্যে রয়েছে ঝুঁকি, দ্রুততা এবং নতুনত্ব। আজকের তরুণরা মোবাইল অ্যাপ থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা, ই-কমার্স, ফিনটেক এবং কৃষি প্রযুক্তি পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি করছেন। এই স্টার্টআপগুলো শুধুমাত্র নতুন পণ্য তৈরি করছে না, তারা গ্রামীণ থেকে নগর সব অঞ্চলের জনগণের জীবনমান উন্নত করছে।
বিশ্বব্যাপী একটি বড় প্রবণতা দেখা যাচ্ছে—ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসার। বাংলাদেশেও এই প্রবণতা স্পষ্ট। তরুণরা সামাজিক সমস্যার সমাধানে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যেমন ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা, অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম এবং স্মার্ট এগ্রিকালচার। প্রযুক্তি ভিত্তিক এই উদ্যোগগুলো জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনছে এবং বহু ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াচ্ছে।
সরকারি উদ্যোগ, যেমন ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রোগ্রাম, স্টার্টআপ ইনকিউবেটর ও এক্সেলেটর প্রকল্প তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। এ সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা দ্রুত তরুণ উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনাকে চিনে গ্রহণ করছেন, যা উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাস এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করছে।
তবে, সবকিছু সাফল্যের পথে নয়। তরুণ উদ্যোক্তাদের সামনে রয়েছে প্রাথমিক পুঁজির অভাব, প্রযুক্তিগত দক্ষতার সীমাবদ্ধতা, আইন ও নীতিমালার জটিলতা। এসব সমস্যার সমাধান না হলে সম্ভাবনাময় এই তরুণ উদ্যোক্তাদের পথে বাধা আসতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্টার্টআপগুলোর সফলতা মূলত নির্ভর করে পরিবেশগত সমর্থন, অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ এবং বাজার প্রবেশের সুযোগের উপর। সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয়ে এই সেক্টরকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলো স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছে। উদাহরণস্বরূপ, ফিনটেক এবং ই-কমার্স সেক্টর থেকে অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও বাজারে প্রবেশের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে।
টেকনোলজির জোরে তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সমাজের সার্বিক উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। একদিকে যেখানে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি বিপ্লব চলছে, সেখানে বাংলাদেশও এই গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে নিজস্ব স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠা করছে।
তাই এই তরুণদের পক্ষে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা, বিনিয়োগ ও আইনি সহায়তা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। শুধু তাই নয়, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা দক্ষতার উপর জোর দিতে হবে যেন আগামী প্রজন্ম আরও দক্ষ হয়ে উঠে এবং দেশের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।