বয়সের ছোঁয়ায় বদলে যায় ত্বক!! জেনে নিন সঠিক সময়ে কীভাবে নাইট ক্রিম ও সিরাম করবে চমৎকার কাজ

বয়সের ছোঁয়ায় বদলে যায় ত্বক!! জেনে নিন  সঠিক সময়ে কীভাবে নাইট ক্রিম ও সিরাম করবে চমৎকার কাজ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ত্বকের বয়সের সঙ্গে তার চাহিদা ও সমস্যা পরিবর্তিত হয়। স্কিনকেয়ারে ব্যবহৃত নাইট ক্রিম, সিরাম এবং বিভিন্ন অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্টের সঠিক ব্যবহার না জানা থাকলে ত্বকের ক্ষতি বা প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই এই প্রতিবেদনে বয়সভিত্তিক স্কিনকেয়ার ও বিজ্ঞানসম্মত দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হলো।

১৮-২৫ বছর: ময়েশ্চারাইজেশন ও প্রাথমিক সুরক্ষা

এই বয়সের ত্বক প্রাকৃতিকভাবে মসৃণ ও তৈলাক্ত হয়, কিন্তু পরিবেশের প্রভাব ও জীবনের ব্যস্ততায় ব্রণ, ফুসকুড়ি এবং পানিশূন্যতা হতে পারে। তাই হালকা, ওয়াটার-বেইজড ময়েশ্চারাইজার এবং হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সিরাম উপযুক্ত। নাইট ক্রিম হিসেবে খুব ভারী বা অ্যান্টি-এজিং উপাদানযুক্ত পণ্য ব্যবহার প্রয়োজন হয় না, বরং ত্বককে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা ও সুরক্ষা দিতে হবে।
 

বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা-

হায়ালুরোনিক অ্যাসিড এক ধরণের পলিমার যা নিজের ওজনের প্রায় ১০০০ গুণ জল ধরে রাখতে সক্ষম, ফলে ত্বক দীর্ঘক্ষণ হাইড্রেটেড থাকে। এই বয়সে সূর্যের ক্ষতিকর আলোর কারণে এন্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।
 

২৬-৩৫ বছর: প্রথম অ্যান্টি-এজিং ধাপ ও সেল রিজেনারেশন:

এই সময়ের মধ্যে ত্বকে সূক্ষ্ম লাইন দেখা দিতে শুরু করে এবং কোলাজেন উৎপাদন ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই নাইট ক্রিম বা সিরামে ভিটামিন C, নিয়াসিনামাইড এবং হালকা রেটিনল যুক্ত পণ্য ব্যবহার করা উচিত।

 যেমন - 

⇨ ভিটামিন C ত্বকের কোলাজেন সৃষ্টিতে সহায়তা করে এবং ফ্রি রেডিক্যাল থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

⇨নিয়াসিনামাইড ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করে, ব্রণ ও দাগ কমায় এবং ত্বকের বাধা শক্তিশালী করে।

⇨রেটিনল কোষের পুনর্গঠন বাড়ায়, তবে প্রথম দিকেই কম শক্তির ফর্মুলা দিয়ে শুরু করা ভালো।
 

৩৬-৪৫ বছর: দৃশ্যমান অ্যান্টি-এজিং ও পুনরুদ্ধার:

এই বয়সে সূক্ষ্ম রেখা, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস এবং শুষ্কতার সমস্যা প্রবল হয়। নাইট ক্রিম ও সিরামে রেটিনল, পেপটাইড এবং সেরামাইড যুক্ত থাকা উচিত। এই উপাদানগুলো কোলাজেনের ক্ষয় রোধ করে, ত্বককে মসৃণ ও দৃঢ় রাখে।

যেমন - 

⇨ পেপটাইড ছোট প্রোটিন যা ত্বকের কোলাজেন তৈরির প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে।

⇨ সেরামাইড একটি প্রাকৃতিক ফ্যাট যা ত্বকের বাধা শক্তিশালী করে, আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং বাহ্যিক দূষণ থেকে রক্ষা করে।

⇨ অ্যাহা (AHA) ও BHA জাতীয় হালকা এসিড সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহারে মৃত কোষ দূর করে ত্বক নতুন করে উদ্ভাসিত করে।
 

৪৬ বছর এবং তার বেশি: গভীর পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী সুরক্ষা :

বয়সের সঙ্গে ত্বকের কোষ পুনর্জীবন কমে যায় এবং সূক্ষ্ম রেখা ও গভীর বলিরেখার দেখা দেয়। এখানে রেটিনয়েডের শক্তিশালী সংস্করণ, কিউটেন (Coenzyme Q10), প্যানথেনল, এবং এমোলিয়েন্ট সমৃদ্ধ নাইট ক্রিম প্রাধান্য পায়। এসব উপাদান ত্বকের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখে।

যেমন - 

⇨ কিউটেন (Coenzyme Q10) একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং বয়সজনিত ক্ষয় প্রতিরোধ করে।

⇨ প্যানথেনল (ভিটামিন B5) ত্বককে শান্ত করে এবং পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

⇨ এমোলিয়েন্টস ত্বকের বাইরের স্তরকে মসৃণ করে ও আর্দ্রতা রোধ করে।
 

কেন 'অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট' গুলো গুরুত্বপূর্ণ?

অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট গুলো হলো সেই উপাদান যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, বার্ধক্য, পানিশূন্যতা, লিপিডের অভাব, কিংবা ডার্মাল ইনফ্ল্যামেশন কমাতে কার্যকর। এগুলো কেবল ত্বকের বাহ্যিক স্তরে কাজ করে না, কোষের গভীরে গিয়ে কার্যপ্রণালী পরিবর্তন করে।
 

বিশেষ সতর্কতা ও  প্যাচ টেস্ট: 

নতুন কোনো পণ্য ব্যবহারের আগে ছোট এলাকায় পরীক্ষা করা উচিত, যাতে অ্যালার্জি বা রিঅ্যাকশন এড়ানো যায়।

⇨ উপাদান সংমিশ্রণ: একসাথে অনেক ধরনের অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার এড়ানো উচিত, যেমন রেটিনল ও অ্যাহা একই সঙ্গে।

⇨ সানস্ক্রিন: বিশেষ করে রেটিনল ব্যবহার করলে পরদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার অপরিহার্য, কারণ রেটিনল ত্বককে সূর্যের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে।

⇨ কমেডোজেনিক নয়: যারা ব্রণ প্রবণ, তাদের জন্য পণ্য অবশ্যই 'non-comedogenic' হতে হবে।

 

ত্বকের বয়স অনুযায়ী যত্নের প্রয়োজনীয়তা ও পণ্যের বৈজ্ঞানিক প্রয়োগকে বোঝা অত্যন্ত জরুরি। ভুল প্রয়োগে ত্বকের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে, তাই সঠিক তথ্য ও বিজ্ঞানভিত্তিক গাইডলাইন মেনে চলাই সেরা উপায়।

সুস্থ, দীপ্তিময় ত্বকের জন্য সময়োপযোগী এবং উপযুক্ত নাইট ক্রিম ও সিরামের ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন। এই প্রতিবেদনে দেয়া তথ্যগুলো কাজে লাগিয়ে আপনার ত্বককে দিন সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকার উপহার।


সম্পর্কিত নিউজ