রাতের গলা শুকিয়ে যাওয়া হতে পারে আপনার শরীরের জরুরি সতর্কবার্তা !!

রাতের গলা শুকিয়ে যাওয়া হতে পারে আপনার শরীরের জরুরি সতর্কবার্তা !!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ঘুমের মাঝে বা রাতে হঠাৎ গলা শুকিয়ে যাওয়া আজকের আধুনিক জীবনের একটি কম জানা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক সংকেত। শুধু অস্বস্তিকর নয়, এটি শরীরের পানিশূন্যতা, শ্বাসনালী সমস্যাসহ নানা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার আগাম ইঙ্গিত হতে পারে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে আজ এই সমস্যা শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণে অনেক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের তরুণ স্টার্টআপের ভূমিকা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

গলা শুকিয়ে যাওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ ও প্রভাব- 

রাতে গলা শুকিয়ে যাওয়া মূলত তখন ঘটে যখন শরীর পর্যাপ্ত লালা উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়। লালা মুখ ও গলার আর্দ্রতা বজায় রেখে শ্বাসনালীর অভ্যন্তরীণ রক্ষা করে। ঘুমের সময় লালা উৎপাদন কমে গেলে গলা শুষ্ক ও জ্বালাপোড়া ভাব হতে পারে। এর পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:

⇨ পানিশূন্যতা (Dehydration): শরীরের জলশূন্যতা লালা উৎপাদন কমিয়ে দেয়, ফলে গলা শুকনো ও ফাটা অনুভূত হয়। বিশেষত গরম আবহাওয়ায়, শারীরিক পরিশ্রমের পর অথবা পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ার কারণে এটি হয়।

⇨শ্বাসপ্রশ্বাসের পথের সমস্যা: সাইনাস ইনফেকশন, অ্যালার্জি বা নাকের বাধার কারণে কেউ মুখ দিয়ে শ্বাস নেন। এতে গলা ও শ্বাসনালী শুষ্ক হয়ে যায়।

⇨ ঘুমের অবস্থান ও পরিবেশ: পিঠের ওপর শুয়ে ঘুমালে শ্বাসনালীর রস শ্লেষ্মায় বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা মুখের শুষ্কতার কারণ। এয়ার কন্ডিশনারের শুষ্ক বাতাসও গলার আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়।

⇨ নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে পানির ঘাটতি ও বারবার প্রস্রাবের কারণে গলা শুকনো ভাব বেশি দেখা যায়।

⇨ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: অনেক ধরনের প্রেসক্রিপশন ওষুধ লালা উৎপাদন কমিয়ে শুষ্ক গলার সমস্যা বাড়ায়।

⇨ স্লিপ অ্যাপনিয়া: এই ঘুমের ব্যাধিতে নিদ্রার সময় শ্বাসনালীর বাধা সৃষ্টি হয়, যা গলা শুষ্ক ও জ্বালাপোড়া করে।
 

প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা -

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য প্রযুক্তিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা হয়েছে স্মার্ট ডিভাইস ও AI ভিত্তিক সিস্টেমের মাধ্যমে। বাংলাদেশেও তরুণ উদ্যোক্তারা এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘুমের সমস্যা ও শরীরের আর্দ্রতা পর্যবেক্ষণের জন্য উন্নত ডিভাইস তৈরি করছেন।

⇨ স্লিপ ট্র্যাকার: আধুনিক স্মার্টওয়াচ ও ফিটনেস ব্যান্ডগুলি শ্বাসের গতি, হৃদস্পন্দন ও ঘুমের পর্যায় বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয় সতর্কবার্তা দেয়।

⇨ হিউমিডিটি কন্ট্রোল ডিভাইস: ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির সাহায্যে বিশেষ যন্ত্র তৈরি হয়েছে, যা গলার শুষ্কতা কমায় ও ঘুমের গুণগত মান বাড়ায়।

⇨ AI হেলথ অ্যাপস: শরীরের পানির মাত্রা, খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক অবস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে স্মার্ট হেলথ রিমাইন্ডার দেয়, যা গলা শুকিয়ে যাওয়া বা অন্যান্য সমস্যা রোধে সহায়ক।

 

তরুণ উদ্যোক্তাদের অবদান: 

দেশে বেশ কিছু স্টার্টআপ আধুনিক AI ও IoT প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্য ট্র্যাকিং ডিভাইস ও সলিউশন বাজারে নিয়ে এসেছে। তারা বিশেষভাবে ঘুমের সমস্যা, শ্বাসনালী সংক্রান্ত রোগ ও পানিশূন্যতার প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।
 

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বিভিন্ন চিকিৎসা গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে, গলা শুকিয়ে যাওয়া বারবার হলে সেটি ডায়াবেটিস, স্লিপ অ্যাপনিয়া, ক্রনিক রাইনাইটিস, অথবা হার্ট রোগের মতো গুরুতর সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। তাই, স্বল্পতর সমস্যার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার যথেষ্ট হলেও, দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

স্বাস্থ্য সচেতনতা ও প্রতিকার

☞ দিনে অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করুন, বিশেষত গরম ও শারীরিক পরিশ্রমের পর।

☞ রাতে ঘুমানোর আগে ভারী ও লবণযুক্ত খাবার পরিহার করুন।

☞ শুষ্ক পরিবেশে ঘুমালে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন।

☞ নাকের শ্বাসনালী খোলা রাখার জন্য প্রয়োজনে নাকের স্প্রে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

☞ সঠিক শয়নভঙ্গি গ্রহণ করুন, যাতে শ্বাসনালীতে চাপ না পড়ে।

☞ ঘুমের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য আধুনিক স্মার্ট ডিভাইস ও স্বাস্থ্য অ্যাপ ব্যবহার করুন।
 

রাতের গলা শুকিয়ে যাওয়া এক সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সংকেত। এটি শরীরের পানিশূন্যতা, শ্বাসনালীর সমস্যা ও ঘুমের ব্যাধির প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী স্টার্টআপ উদ্যোগগুলো এই সংকেতগুলোকে দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা ও জীবনধারায় পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করছে। তরুণ উদ্যোক্তাদের এই ভূমিকা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

তথ্যসূত্র: সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট |


সম্পর্কিত নিউজ