কারিগরি শিক্ষায় এগিয়ে বাংলাদেশ: তরুণদের দক্ষতা ও কর্মসংস্থানে এক নতুন অধ্যায়

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বর্তমান বিশ্বে দ্রুত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দক্ষতা অর্জন দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা ও টেকনিক্যাল এডুকেশন, ভোকেশনাল এন্ড ট্রেনিং (টিভেট) ব্যবস্থা এবং স্কিল ট্রেনিং সেন্টারগুলো দেশীয় শ্রম বাজারের প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তরুণ প্রজন্মকে প্রস্তুত করছে। এই প্রক্রিয়া শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করছে না, বরং দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করছে।
পলিটেকনিক কলেজ ও টিভেটের ভূমিকা: বাংলাদেশে পলিটেকনিক কলেজগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার অপারেশন, ইলেকট্রনিক্স, টেক্সটাইল ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। তারা শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে বাস্তবসম্মত দক্ষতা তুলে ধরছে, যা শিক্ষার্থীদের দ্রুত শিল্পক্ষেত্রে প্রবেশে সাহায্য করছে। টিভেট প্রতিষ্ঠানগুলো পেশাদার দক্ষতা ও কর্মসংস্থান উপযোগী ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে তরুণদের উৎপাদনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কৌশলগতভাবে প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রম তৈরি করা হচ্ছে যাতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হয়।
স্কিল ট্রেনিং সেন্টারের আধুনিকীকরণ: দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কিল ট্রেনিং সেন্টারগুলো প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে চালু রয়েছে, যেখানে গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রি চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে কোর্স ডিজাইন করা হয়। অটোমোবাইল মেকানিক্স, সোলার সিস্টেম, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েল্ডিং, প্লাম্বিং, এবং আরও নানা ক্ষেত্রে তরুণদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষিতরা দ্রুত কর্মসংস্থান লাভ করছে বা স্বনির্ভর উদ্যোক্তা হিসেবে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করছে।
তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের গুরুত্ব: বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০% ৩০ বছরের নিচে, যার একটি বড় অংশ কর্মক্ষম বয়সী তরুণ। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তারা শিল্প ও সেবা খাতে যোগ দিতে পারলে বেকারত্ব কমবে এবং দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। দক্ষতা অর্জন তরুণদের প্রতিযোগিতামূলক শ্রম বাজারে স্থান করে নিতে সক্ষম করে তোলে, যা বিদেশি বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতেও সহায়ক।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব: কারিগরি শিক্ষায় উন্নতি বাংলাদেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দক্ষ শ্রমিকরা বিদেশি কর্মসংস্থানও অর্জন করছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এছাড়া, স্কিলড যুবকরা স্থানীয় শিল্প খাতে কাজ করে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক উন্নয়নেও অবদান রাখছে।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়: সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে টিভেট ও স্কিল ট্রেনিং সেক্টরকে সমর্থন দিচ্ছে। "ডিজিটাল বাংলাদেশ" ও "ভিশন ২০৪১" জাতীয় কৌশলের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষাকে আরও বেগবান করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দক্ষতা উন্নয়নে অংশগ্রহণ বাড়িয়ে চলেছে, যা প্রশিক্ষণ মানোন্নয়নে সহায়ক হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ দিশা: তবে, কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনও মানগত পার্থক্য, অবকাঠামোর অভাব এবং প্রশিক্ষকের দক্ষতা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এসব সমাধানের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ও শিক্ষাবিষয়ক নতুন পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে কোর্স প্রোগ্রাম উন্নয়ন এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় বাড়ানো প্রয়োজন।
কারিগরি শিক্ষা, টিভেট ও স্কিল ট্রেনিং সেন্টারগুলো বাংলাদেশে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলছে, যা তরুণদের কর্মসংস্থান ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ ও আধুনিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে, দেশের শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে।