অন্তর্বর্তী সরকারের ২০২৫-২৬ বাজেট অনুমোদন: কমছে আকার, বাড়ছে জনমুখী প্রত্যাশা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আজ সোমবার (২ জুন) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে এই অনুমোদন আসে। বিকেল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিটিভির মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে এই বাজেট পেশ করবেন।
এবারের বাজেটের মোট আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। এটি গত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট থেকে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। অন্তর্বর্তী সরকার খোলাখুলিই জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য "উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা লুটপাটের উন্নয়নে ব্যয় না করে প্রয়োজনীয় বাজেট" প্রণয়ন করা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পটপরিবর্তনের পর জাতীয় সংসদ না থাকায়, এবারই প্রথম অর্থ উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বাজেট ঘোষণা করছেন।
বিগত ১৬ বছর ধরে প্রতি বছরই বাজেটের আকার বেড়েছে, কিন্তু দেশের অর্থনীতি কয়েক বছর ধরেই মন্দা সময় পার করছিল। সাধারণ মানুষ ছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতির কষাঘাতে দিশাহারা। ডলার সংকট, রিজার্ভের বড় ক্ষয় এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বড় ধরনের সমস্যায় ভুগেছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বাজেটকে প্রায় আট লাখ কোটি টাকায় নিয়ে গিয়েছিল। তবে ২০০৮-০৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়নের গড় হার ছিল মাত্র ৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতি বছর ঘোষিত বাজেটের ১৪-১৫ শতাংশই অবাস্তবায়িত থেকে যেত, যা সময়ের সাথে সাথে আরও বড় সমস্যা তৈরি করেছে।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, আর ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাতের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেবে।
নতুন অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, পরিচালন ও নন-এডিপি খাতে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রের নাগরিকদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সুরক্ষা, মৌলিক সেবার নিশ্চয়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈষম্য দূর করা এবং একটি জনকল্যাণমুখী বাজেট উপহার দেওয়া। অতীতের বাজেটগুলোতে এমন কথা কেবল প্রস্তাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও, এবারের বাজেটে সেগুলোর বাস্তবায়ন হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
আসন্ন অর্থবছরের সম্ভাব্য এডিপিতে মোট বরাদ্দের প্রায় ৭০ শতাংশ (৬৯.৯৩ শতাংশ) পাঁচটি প্রধান খাতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা, গৃহায়ন ও কমিউনিটি, এবং স্বাস্থ্য। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এবারের এডিপিতে মোট ১ হাজার ১৪৩টি প্রকল্প রয়েছে, যার মধ্যে বিগত সরকারের নেওয়া অতিমূল্যায়িত অনেক প্রকল্পেও সম্ভাব্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।