কে কুরবানি দিতে পারবে: যোগ্যতা ও শর্তাবলি

কে কুরবানি দিতে পারবে: যোগ্যতা ও শর্তাবলি
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে কুরবানি কার জন্য ওয়াজিব: কুরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগের মহান স্মৃতিকে ধারণ করে পালন করা হয়।

ঈদুল আজহার মূল উৎসবই কুরবানিকে ঘিরে। তবে ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, কুরবানি সবার জন্য নয়—এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে। হাদিস ও ফিকহের আলোকে এই যোগ্যতা ও শর্তগুলো নিচে তুলে ধরা হলো- 

১. মুসলিম হওয়া

কুরবানি কেবল মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত। অমুসলিমদের ওপর এর কোনো বিধান নেই।

২. প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) হওয়া

ছোট শিশুর ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। তবে অভিভাবক চাইলে তাদের পক্ষ থেকে কুরবানি করতে পারেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর নাতি–নাতনির পক্ষ থেকেও আকিকার সময় পশু জবাই করেছেন (আবু দাউদ: ২৮৪২)।

৩. আকলবান (বুদ্ধিমান) হওয়া

পাগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ওপর কুরবানি ফরজ নয়, যদি না তার মালিকানায় সম্পদ থাকে এবং অভিভাবক তা দেন।

৪. মুকিম (স্থায়ী বাসিন্দা) হওয়া

মুসাফিরদের (ভ্রমণকারীদের) ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। যদিও চাইলে তারা কুরবানি করতে পারেন।

৫. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া

যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ৭.৫ তোলা সোনা বা ৫২.৫ তোলা রুপা অথবা তার সমপরিমাণ সম্পদ আছে, সে ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব।

দলিল: "যার সামর্থ্য রয়েছে, অথচ কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।" – (ইবনে মাজাহ: ৩১২৩, সহিহ হিসেবে গ্রহণযোগ্য)

৬. নির্দিষ্ট সময়ে কুরবানি করা

জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবানি করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন: "তারা যেন নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর রিজিক দেওয়া পশুদের ওপর, আর তা থেকে খাও ও গরিব-দুঃখীদের খাওয়াও।" – (সুরা হজ্জ, আয়াত ২৮)
 

অতিরিক্ত দিকনির্দেশনা:

১। একজন ব্যক্তি নিজের, পরিবারের পক্ষ থেকে বা মৃত আত্মীয়ের পক্ষ থেকেও কুরবানি করতে পারেন। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল—হে রাসূল! আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেন নি। আমার মনে হয় তিনি কোনো কথা বলতে পারলে অসিয়ত করে যেতেন। আমি যদি এখন তার পক্ষ থেকে সদকা করি তাতে কি তার সওয়াব হবে ? তিনি উত্তর দিলেন: হ্যাঁ। [বুখারি: ১৩৩৮,২৭৬০, মুসলিম: ১০৪। ] 

২। নারীরা যদি উল্লিখিত শর্ত পূরণ করেন, তাদের ওপরও কুরবানি ওয়াজিব হয়। পুরুষ-নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য।

৩। কুরবানি করতে সক্ষম হয়েও ইচ্ছাকৃতভাবে তা না করা গোনাহের কাজ।

 

কুরবানি হচ্ছে একটি পবিত্র ইবাদত, যা আর্থিক ও আত্মিক উভয় দিক থেকেই মানুষের চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখে। তবে এর জন্য শরিয়তের নির্ধারিত শর্ত মানা জরুরি। যারা এসব শর্ত পূরণ করেন, তাদের জন্য কুরবানি ওয়াজিব। অন্যথায় কুরবানি না করলেও শরিয়ত তাদের ওপর বাধ্যবাধকতা দেয় না।


সম্পর্কিত নিউজ