ইসলাম ধর্মে কুরবানির জন্য নির্ধারিত পশু ও বয়স সম্পর্কিত নির্দেশনা

ইসলাম ধর্মে কুরবানির জন্য নির্ধারিত পশু ও বয়স সম্পর্কিত নির্দেশনা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

কুরবানি ঈদুল আজহার অন্যতম প্রধান ইবাদত, যা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ত্যাগ ও আনুগত্যের স্মরণে পালিত হয়। তবে কুরবানির জন্য যেকোনো পশু ব্যবহার করা যাবে না। ইসলাম নির্দিষ্ট কিছু প্রাণীকে কুরবানির উপযোগী বলে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাদের বয়স ও শারীরিক দিক থেকেও কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছে।

  কুরবানির শর্তাবলি:

☞ কুরবানির জন্য উপযুক্ত পশু -

 এমন পশু দ্বারা কুরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। এ গুলোকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় 'বাহীমাতুল আন'আম।' যেমন, আল্লাহ বলেন: —

'প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিয্ক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও ।'[সূরা হজ, আয়াত: ৩৪ ] 

আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোনো জন্তু কুরবানি করেননি ও কুরবানি করতেও বলেননি। তাই কুরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে।

ইমাম মালিক রহ.-এর মতে কুরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হল শিং ওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের দুম্বা কুরবানি করেছেন বলে বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে।

 

☞  বয়সের নির্দিষ্ট শর্ত- 

শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। 

হাদিসে এসেছে:—

জাবের রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "তোমরা অবশ্যই এক বছরের বয়সের ছাগল কুরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কুরবানি করতে পার"।[মুসলিম, হাদিস: ১৯৩৬ ]
 

১। ভেড়া / দুম্বা

সাধারণ শর্ত: কমপক্ষে ১ বছর পূর্ণ হতে হবে।

ব্যতিক্রম: ছয় মাস বয়সী ভেড়া যদি দেখতে পূর্ণ এক বছরের মতো হয়, তাহলে তা কুরবানি করা যায়।

(হাদিস: সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৯৬৩)

২। ছাগল

বয়স: এক বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি।

৩। গরু / মহিষ

বয়স: দুই বছর পূর্ণ হওয়া আবশ্যক। কম বয়স হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

৪। উট

বয়স: পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক।
 

☞ কুরবানির পশুর দেহগত শর্ত-

গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হল কুরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক মাংস সম্পন্ন, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর হওয়া।

কুরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদিসে এসেছে:—

সাহাবি আল-বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন: চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানি জায়েয হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না—
 

১। অন্ধ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট।

২।রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট

৩। পঙ্গু; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং

৪। আহত; যার কোনো অঙ্গ ভেঙ্গে গেছে। নাসায়ির বর্ণনায় 'আহত' শব্দের স্থলে 'পাগল' উল্লেখ আছে।[ তিরমিযি, হাদিস: ১৫৪৬, নাসায়ী: ৪৩৭১ ]

আবার পশুর এমন কতগুলো ত্রুটি আছে যা থাকলে কুরবানি আদায় হয় কিন্তু মাকরূহ হবে। এ সকল দোষত্রুটি যুক্ত পশু কুরবানি না করা ভাল। সে ত্রুটিগুলো হল শিং ভাঙ্গা, কান কাটা, লেজ কাটা, ওলান কাটা, লিঙ্গ কাটা ইত্যাদি।

☞ যে পশুটি কুরবানি করা হবে তার উপর কুরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকি পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কুরবানি আদায় হবে না।

 

অংশীদারিত্বের বিধান -

উট ও গরু-মহিষে সাত ভাগে কুরবানি দেয়া যায়। যেমন হাদিসে এসেছে—

জাবের রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, 'আমরা হুদাইবিয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানি দিয়েছি।'[ইবনে মাজাহ্‌: ৩১৩২ ]
 

অর্থাৎ, 

১। উট ও গরু: একটি পশুতে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারেন, তবে সবার নিয়ত কুরবানি অথবা সদকা হতে হবে। (হাদিস: সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৩১৮)

২। ছাগল / ভেড়া: কেবল একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা যায়।


সম্পর্কিত নিউজ