শিক্ষা উন্নয়নে SDG রোডম্যাপে দৃঢ়পদে বাংলাদেশ

শিক্ষা উন্নয়নে  SDG রোডম্যাপে দৃঢ়পদে বাংলাদেশ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাংলাদেশ এখন আর শুধু উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নয়-টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনে এক 'মডেল নেশন' হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭টি SDG লক্ষ্যপূরণের পথে দেশটি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে চতুর্থ লক্ষ্য-"সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা"-তে।

এই অগ্রযাত্রা কোনো হঠাৎ অর্জন নয়—বরং এটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রযুক্তি সংযোজন ও নীতিনির্ধারকদের ধারাবাহিক সিদ্ধান্তের ফসল।
 

➤  বাংলাদেশের SDG 4 অর্জনের অগ্রগতি: পরিসংখ্যান যা বলে

⇨  ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ, বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার দাঁড়িয়েছে ৯৮.৭%, যা দক্ষিণ এশীয় গড় (৯২.৩%) ছাড়িয়ে গেছে।

⇨মাধ্যমিকে মেয়েদের অংশগ্রহণ এখন ৫৩.২%, যা কেবল লিঙ্গ সমতার ইঙ্গিতই নয়, বরং একটি মনস্তাত্ত্বিক সামাজিক রূপান্তরের সূচক।

⇨ ই-লার্নিং এবং টিভি ভিত্তিক শিক্ষা কোভিড-পরবর্তী নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করেছে, যার মধ্যে "মাল্টি-মিডিয়া ক্লাসরুম" ও "শিক্ষা টেলিভিশন" অন্যতম।
 

➤  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সেতুবন্ধনে শিক্ষা

বাংলাদেশের শিক্ষা খাত এখন প্রযুক্তি-নির্ভর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সাথে একাত্ম হচ্ছে।

⇨ জাতীয় পর্যায়ে চালু হয়েছে Digital Content Repository, যেখানে শিক্ষকরা হাজার হাজার পাঠ পরিকল্পনা ও অ্যানিমেটেড লার্নিং ভিডিও পেতে পারেন।

⇨ AI ও ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পারফরমেন্স ট্র্যাক করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পদ্ধতিও ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে।
 

শিক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তিমূলক রূপান্তর

 টেকসই উন্নয়নের মূল মন্ত্র হচ্ছে কাউকে পিছনে না ফেলা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ শিক্ষা ক্ষেত্রে নীচের ক্ষেত্রগুলোতে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে—

⇨ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার (যেমন: ব্রেইল সফটওয়্যার, স্পিচ-টু-টেক্সট টুল)

⇨ চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষায় পাঠ্যবই সরবরাহ

⇨ মেয়েদের মাসিক স্বাস্থ্যসচেতনতা ও স্কুলে উপস্থিতি বাড়াতে 'স্কুল হেলথ প্রোগ্রাম'
 

যেসব চ্যালেঞ্জ এখনো সামনে

এই আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির মাঝেও কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে—

⇨ ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর হার এখনো গ্রামীণ এলাকায় ১৭.৫%

⇨ ডিজিটাল বিভাজন (Urban-Rural Internet Access Gap) এখনো বড় বাধা—গ্রামাঞ্চলের ৬৪% বিদ্যালয়ে এখনো উচ্চগতির ইন্টারনেট নেই

⇨  শিক্ষকদের মানোন্নয়ন এবং "নলেজ-ভিত্তিক ক্লাসরুম" চালু করার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ঘাটতি রয়েছে
 

ভবিষ্যতের রূপরেখা: ২০৩০ সালের লক্ষ্যে কী থাকছে?

⇨ Hybrid Education Model (অনলাইন ও অফলাইন মিলিত পাঠদান)

⇨ AI-বেসড অ্যাসেসমেন্ট সিস্টেম চালুর মাধ্যমে শিক্ষা মান যাচাই

⇨ গবেষণাভিত্তিক শিক্ষা নীতিমালা এবং প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে "রিসার্চ সেল" প্রতিষ্ঠা বাধ্যতামূলক

⇨ শিক্ষা বাজেটকে জাতীয় বাজেটের ২০% পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা
 

বাংলাদেশ কি ২০৩০ সালের SDG 4 অর্জন করতে পারবে?

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান গতিতে অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ SDG 4-এর ৭০-৮০% লক্ষ্যমাত্রা সময়মতো অর্জন করতে পারবে। তবে তা নির্ভর করছে তিনটি বিষয়ের ওপর:

 ১. বাজেটের সঠিক বরাদ্দ ও ব্যবহার

 ২. শিক্ষক প্রশিক্ষণে আধুনিকায়ন

 ৩. শিক্ষা-গবেষণা ও শিল্পের মাঝে সংযোগ গড়ে তোলা
 

বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের এই রূপান্তর নিছক পরিসংখ্যানগত উন্নয়ন নয়—এটি একটি নীরব বিপ্লব, যা মানবসম্পদ উন্নয়ন ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা তৈরি করছে। জাতিসংঘের ২০৩০ ভিশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশের শিক্ষা খাত যে এখন 'কান্ট্রি টু ওয়াচ'-এর তালিকায়, তা দিন দিন আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে।
 

তথ্যসূত্র:

- ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিকস

- বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (BANBEIS)

- জাতিসংঘ SDG গ্লোবাল ড্যাশবোর্ড

- শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন (২০২৪)


সম্পর্কিত নিউজ