বাচ্চাদের কোরবানির শিক্ষা: ঈদের মাধ্যমে শিশুদের নৈতিকতা গঠনের এক অনন্য সুযোগ

বাচ্চাদের কোরবানির শিক্ষা: ঈদের মাধ্যমে শিশুদের নৈতিকতা গঠনের এক অনন্য সুযোগ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা আত্মত্যাগ, আনুগত্য ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এই ঈদের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে কোরবানি, যা শুধু একটি রীতি নয়—বরং একটি জীবন্ত শিক্ষা। শিশুর মানসিক বিকাশ ও চারিত্রিক গঠনে কোরবানির শিক্ষা এক অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে, যদি তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়।

কোরবানি: ত্যাগের আদর্শ শেখায় শিশুদের

কোরবানির মর্মার্থ শিশুকে বোঝানো মানেই তার মনে ত্যাগ ও দায়িত্ববোধের বীজ বপন করা। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর কোরবানির ঘটনা আল্লাহর প্রতি নিখাদ আনুগত্য ও আত্মত্যাগের এক চিরন্তন দৃষ্টান্ত। এ শিক্ষা শিশুদের হৃদয়ে পৌঁছালে, তারা ছোটবেলা থেকেই আত্মনিয়ন্ত্রণ, দায়িত্বশীলতা ও বিশ্বাসে দৃঢ় হতে শিখে।
 

কোরআনের ভাষায়:

"যখন ইসমাইল বলল, হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।" (সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১০২)
 

এই আয়াতে আল্লাহর আদেশ মানার প্রতি সন্তানের সম্মানবোধ ও আনুগত্যের স্পষ্ট দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়—যা শিশুদের নৈতিকতার শিক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
 

পরিবার থেকেই শুরু হোক কোরবানির শিক্ষা

কোরবানির সময় বাবা-মা যদি সন্তানদের কোরবানির পশুর দেখভাল, খাবার দেওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মাংস বণ্টনে অংশগ্রহণ করায়, তবে এতে শিশুদের মধ্যে করুণা, সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধ তৈরি হয়। বাস্তব জীবনে তারা অন্যদের অধিকার ও প্রয়োজন বুঝে চলতে শেখে।

অনেক পরিবারে দেখা যায়, ছোটদের পশু নির্বাচন বা নাম রাখার সুযোগ দেওয়া হয়। এতে শিশুরা আনন্দের পাশাপাশি একটি ইবাদতের সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত হয়।
 

কোরবানির গোশত বণ্টনের মাধ্যমে সহানুভূতির শিক্ষা

রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির গোশত নিজে খেতেন, পরিবারকে খাওয়াতেন ও গরিবদের দান করতেন। এই শিক্ষা শিশুকে শেখানো মানে তার মনে মেহেরবানি, সামাজিক দায়িত্ব ও সাম্যের চেতনা গড়ে তোলা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করতেন । প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (কুরবানীর মাংস) তোমরা খাও, জমা কর, এবং দান কর।'' তিনি আরো বলেন, ''তা খাও, খাওয়াও এবং জমা রাখ।''(মুসলিম ১৯৭১নং) 
 

আধুনিক প্রেক্ষাপটে শিশুদের জন্য কোরবানির তাৎপর্য

আজকের প্রযুক্তিনির্ভর যুগে অনেক শিশু ঈদকে শুধুই ভোজ ও পোশাকের উৎসব হিসেবে দেখে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ঈদুল আজহার মূলে রয়েছে আত্মত্যাগ, আল্লাহর বিধান মানা এবং সামাজিক ভারসাম্য তৈরি করা। তাই শিশুদের এই ঈদের আধ্যাত্মিক দিক সম্পর্কে সচেতন করাই হলো বাবা-মায়ের দায়িত্ব।

ঈদুল আজহার কোরবানি শিশুদের জন্য একটি জীবন্ত পাঠশালা। এই সময়টা যদি আমরা তাদের সামনে আত্মত্যাগ, ভালোবাসা, সহানুভূতি ও ঈমানদারির বার্তা পৌঁছে দিতে পারি, তবে তারা ভবিষ্যতে একটি নৈতিক, দায়িত্বশীল ও আল্লাহভীরু প্রজন্ম হয়ে গড়ে উঠবে। শুধু ঈদের দিন পশু জবাই নয়, বরং এটি হওয়া উচিত হৃদয় গঠনের এক পবিত্র সুযোগ।


সম্পর্কিত নিউজ