ইসুবগুলের ভুসিতে লুকিয়ে আছে অভ্যন্তরীণ সুস্থতার চাবিকাঠি!

ইসুবগুলের ভুসিতে লুকিয়ে আছে অভ্যন্তরীণ সুস্থতার চাবিকাঠি!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

প্রতিদিনের জীবনে হজমের সমস্যা, রক্তে শর্করার ওঠানামা কিংবা অতিরিক্ত ওজন—এই সমস্যাগুলো যেন এখন ঘরে ঘরে সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ প্রকৃতির ভান্ডারে এমন একটি উপাদান রয়েছে, যা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্যভাবে এসব সমস্যা সামলাতে পারে—তা হলো ইসুবগুলের ভুসি।

ইসুবগুল (Psyllium Husk)—একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, অ-প্রসেসড আঁশজাতীয় উপাদান। এটি গাছের বীজের আবরণ থেকে সংগ্রহ করা হয়, যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—শরীরে প্রবেশ করে এটি জেলির মতো আকার নেয় এবং হজমতন্ত্রে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলিকে সহায়তা করে।
 

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ইসুবগুল কীভাবে কাজ করে?

১. জেল-আকৃতির ফাইবার: ইসুবগুল পানির সংস্পর্শে এসে আকারে ফুলে ওঠে এবং অন্ত্রে জেলির মতো মিশ্রণ তৈরি করে। এটি হজমে সহায়ক এবং বিষাক্ত উপাদান শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে।

২. প্রোবায়োটিক খাদ্য: গবেষণায় দেখা গেছে, ইসুবগুল হজমতন্ত্রে বসবাসকারী ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি উৎসাহিত করে, যা পরোক্ষভাবে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

৩. গ্লুকোজ শোষণের গতি কমায়: এটি কার্বোহাইড্রেটের শোষণ ধীর করে, ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি স্বাভাবিক রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণকারী হিসাবে কাজ করে।
 

যেসব সমস্যার 'প্রাকৃতিক প্রতিকার' হতে পারে ইসুবগুল:

⇨ কোষ্ঠকাঠিন্য: সবচেয়ে পরিচিত ব্যবহার। প্রতিদিনের সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করলে মল নরম হয়ে সহজে নির্গত হয়।

⇨ ওজন কমানো: খাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে, ক্ষুধা কমে এবং ক্যালোরি ইনটেক কমে যায়।

⇨ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: এটি এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) কমিয়ে দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

⇨ পেটের ফোলাভাব ও গ্যাস: অন্ত্র পরিষ্কার থাকলে এই সমস্যাগুলোর প্রবণতাও কমে যায়।

⇨ ডায়রিয়া এবং ডিহাইড্রেশন: অতিরিক্ত পানির শোষণ ঘটিয়ে পাতলা পায়খানা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

⇨ পাইলস (অর্শ): মল নরম হওয়ায় মলত্যাগের সময় ব্যথা ও রক্তপাত অনেকটাই হ্রাস পায়।
 

সতর্কতার বিষয়:

ইসুবগুল একাই 'ম্যাজিক সমাধান' নয়। এটি কাজ করে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের সহিত। এবং অবশ্যই এটি খাওয়ার সময় প্রচুর পানি গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক, নতুবা গলা বা অন্ত্রে আটকে গিয়ে উল্টো সমস্যা হতে পারে।

এছাড়া, কারও যদি দীর্ঘমেয়াদি অন্ত্রের জটিলতা, কিডনির সমস্যা বা কোনও ওষুধ চলমান থাকে—তাহলে ব্যবহার করার আগে পুষ্টি-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

দামি সাপ্লিমেন্ট কিংবা ব্যয়বহুল চিকিৎসা নয়—এক চামচ ইসুবগুলের ভুসি প্রতিদিনই হতে পারে সুস্থতার এক শক্তিশালী সঙ্গী। যেসব সমাধানের পেছনে আমরা দিনের পর দিন সময় ও অর্থ ব্যয় করি, তার কার্যকর একটি বিকল্প হয়ে উঠতে পারে এই সহজলভ্য, নির্ভরযোগ্য প্রাকৃতিক আঁশ। শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার ও সজীব রাখতে চাইলে আজ থেকেই খাদ্যতালিকায় যুক্ত করুন ইসুবগুল—প্রাকৃতিক, নিরাপদ ও কার্যকর।


সম্পর্কিত নিউজ