ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের তাৎপর্য ও বাস্তব প্রয়োগ

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের তাৎপর্য ও বাস্তব প্রয়োগ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। এটি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং মুসলমানের জীবনে আত্মশুদ্ধি, একতা ও তাকওয়ার বাস্তব চর্চা। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মুসলমান হজ পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র নগরী মক্কায় সমবেত হন, যার মাধ্যমে তাদের ঈমান নবায়ন হয় এবং আত্মিক বিশুদ্ধতা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়।

হজ কেন ফরজ?

হজ ফরজ হয়েছে কেবলমাত্র সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর। কুরআনে আল্লাহ বলেন: "এবং মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, তার উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাবা গৃহে হজ করা ফরজ।" — (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭)

এ আয়াতের ভিত্তিতে ইসলামী শরিয়তে হজ একটি বাধ্যতামূলক ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। কোনো ব্যক্তি যদি আর্থিক, শারীরিক ও নিরাপত্তাগত দিক থেকে সক্ষম হন, তাহলে জীবনে একবার হজ পালন করা তার ওপর ফরজ হয়ে যায়।


হাদিসে হজের তাৎপর্য

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: "যে ব্যক্তি হজ করল এবং অশ্লীল কথা বলল না ও গুনাহ করল না, সে এমনভাবে ফিরে আসে যেমন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল।" - (সহীহ বুখারী: ১৫২১)

এ হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, হজ কেবল একটি শারীরিক রীতিনীতি নয়, বরং এটি গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের একটি মহাসুযোগ।

হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা - যেমন ইহরাম পরিধান, আরাফার ময়দানে অবস্থান, মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, কাবা শরীফ তাওয়াফ ইত্যাদি প্রতিটি ধাপ একজন মুসলমানকে আত্মবিশ্লেষণ, ধৈর্য ও আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়।

ইহরাম পরিধান করার মাধ্যমে মুসলমান ধন-সম্পদ, সামাজিক মর্যাদা, পদের অহংকার সবকিছু পিছনে ফেলে এক অভিন্ন পরিচয়ে একত্রিত হয় - "আমি একজন বান্দা"।

আরাফাহ দিবস সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন: "হজ হচ্ছে আরাফাহ।" - (জামে তিরমিযী: ৮৯১)

এদিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হলো হজের মূল রোকন। এই দিনেই আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষমা করে থাকেন।


বাস্তব প্রয়োগ ও একতার প্রতিচ্ছবি

হজ শুধু আধ্যাত্মিক নয়; এটি মুসলমানদের মধ্যে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও একতার শক্তিশালী বার্তা দেয়। সাদা ইহরামে মিলিত হয়ে জাতি-ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে সকল মুসলমান এক কাতারে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করে — ইসলাম একটি বিশ্বজনীন ধর্ম।

হজ এমন এক ইবাদত যা মানুষকে গুনাহ থেকে মুক্ত করে এবং তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত জীবনযাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এটি মুসলমানের জীবনে আত্মশুদ্ধির এক অনন্য উপলক্ষ, যা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই পালন করা হয়।

অতএব, যারা সামর্থ্যবান, তাদের উচিত দেরি না করে আল্লাহর ফরজ আদায়ের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়া।


সম্পর্কিত নিউজ