ঈদুল আযহা: নামাজ, নিয়ম এবং গুরুত্ব

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ঈদুল আযহা, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব, যা প্রতি বছর মুসলমানদের মধ্যে এক ধর্মীয় উদযাপন হিসেবে পালিত হয়। এটি কুরবানির ঈদ হিসেবেও পরিচিত, যা মুসলিমদের জন্য আত্মত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রতীক।এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়। এই দিনটির মাধ্যমে মুসলমানরা কুরবানি দিয়ে গরিবদের সাহায্য করেন এবং সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে আল্লাহর কাছে শোকর আদায় করেন।
➤ ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম-
ঈদুল আযহার নামাজ ইসলামী শরিয়তে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নামাজ, যা দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ হিসেবে ঈদের দিন পবিত্র ঈদগাহে আদায় করা হয়। এই নামাজের জন্য কিছু বিশেষ নিয়ম এবং পদ্ধতি রয়েছে, যা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ঈদুল আযহার নামাজের নিয়মাবলী বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:
☞ নিয়ত:
ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত আরবিতে এভাবে করা হয়:
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা আলা রাকয়াতাই ছালাতি ঈদিল আযহা মাআ ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা আলা ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অনেকের ধারণা নামাজের নিয়ত আরবিতে করা জরুরি। এমনটি ঠিক নয়। যে কোনো ভাষাতেই নামাজের নিয়ত করা যায়। নিয়ত মনে মনে করাই যথেষ্ট।
☞ নামাজের পদ্ধতি
⇨ নামাজ শুরু: ইমামের পেছনে কেবলামুখি হয়ে ঈদুল আযহার দু'রাকাত ওয়াজিব নামাজ ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি- এমন নিয়ত করে 'আল্লাহু আকবার' বলে হাত তুলে তাহরিমা বাঁধবে। তারপর সানা (সুবহানাকাল্লাহুম্মা...) পুরোটা পড়বে।
⇨ তিনটি অতিরিক্ত তাকবির: সানা পড়ার পর প্রথম তিনটি তাকবির প্রদান করতে হবে।
✪প্রথম দু'বার 'আল্লাহু আকবার' বলে হাত কান পর্যন্ত তুলে ছেড়ে দিতে হবে।
✪তৃতীয় তাকবির বলার পর উভয় হাত বেঁধে নিতে হবে।
⇨সুরা ফাতেহা ও সূরা পড়া: তিনটি তাকবিরের পর 'আউযুবিল্লাহ' এবং 'বিসমিল্লাহ' পড়ার পর সূরা ফাতেহা পড়তে হবে, এরপর আরেকটি সূরা মেলাতে হবে।
⇨রুকু ও সিজদা: নামাজের প্রথম রাকাতে রুকু ও সিজদা আদায় করার পর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো হবে।
⇨ দ্বিতীয় রাকাত: দ্বিতীয় রাকাতে আবার তিনটি তাকবির দেওয়া হবে, তবে এইবার প্রথমে সূরা ফাতেহা পড়তে হবে, এরপর আরেকটি সূরা মেলাতে হবে।
⇨ এরপর অতিরিক্ত তিন তাকবির দিতে হবে,প্রতিটি তাকবির এ হাত ছেড়ে দিতে হবে।
চতুর্থ তাকবিরে হাত ছেরে দিয়ে রুকুতে যেতে হবে।
⇨শেষ রুকু ও সেজদা: চতুর্থ তাকবিরে রুকুতে চলে যেতে হবে। এরপর সেজদা আদায় করে আখেরি বৈঠক (তাশাহুদ) শেষে 'আসসালামু আলাইকুম' বলে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ হবে।
☞ ঈদের নামাজের বিশেষ দোয়া
ঈদের নামাজের পর দুইটি খুতবা প্রদান করা হয়। এটি মুসলমানদের জন্য ঈদুল আযহার গুরুত্ব, আত্মত্যাগ, কুরবানির গুরুত্ব এবং ইসলামিক শিক্ষা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়।
➤ ঈদুল আযহার নামাজের সুন্নত ও মোস্তাহাব কার্যাবলী-
ঈদের দিনটি মুসলমানদের জন্য বিশেষ সৌন্দর্যপূর্ণ, যেখানে তাদের খুশি, সহানুভূতি এবং ঈমানের পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটে। এই দিনটি উপভোগ করার জন্য কিছু সুন্নত ও মোস্তাহাব রয়েছে:
১। মিসওয়াক ও গোসল: ঈদের দিনে মিসওয়াক করা এবং গোসল করা সুন্নত।
২। ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া: ঈদগাহে যাওয়ার সময় হেঁটে যাওয়াই উত্তম এবং দুটি ভিন্ন রাস্তা দিয়ে যাওয়া মোস্তাহাব।
৩। সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোশাক পরিধান: ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব।
৪।খুশির ভাব প্রকাশ: ঈদের দিনে মুখে হাসি রেখে অন্যদের সঙ্গে দেখা করা এবং তাদের সঙ্গে আনন্দ বিনিময় করা মোস্তাহাব।
৪। আল্লাহর প্রশংসা: ঈদগাহে যাওয়ার পথে তাকবির (আল্লাহু আকবার) পড়া সুন্নত।
➤ ঈদুল আযহার ঐতিহ্য ও তাৎপর্য
ঈদুল আযহা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি মুসলিম জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কুরবানির মাধ্যমে গরিবদের সাহায্য করা, একে অপরের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা ঈদের মূল উদ্দেশ্য। ইসলামে এই দিনটি আত্মত্যাগ, একতা এবং ইসলামী শিক্ষার শক্তিশালী প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
ঈদের নামাজ, কুরবানি, এবং অন্যান্য সুন্নত ও মোস্তাহাব কার্যাবলী মুসলমানদের হৃদয়ে ঈমান এবং মানবিক মূল্যবোধ শক্তিশালী করে তোলে।