কুরবানির চামড়া ব্যবস্থাপনা ও সদকা হিসাবে ব্যবহার

কুরবানির চামড়া ব্যবস্থাপনা ও সদকা হিসাবে ব্যবহার
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ঈদুল আজহার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো কুরবানির পশুর চামড়া। ধর্মীয় বিধানে কুরবানির চামড়া সম্পূর্ণভাবে সদকা (দান) করার নির্দেশনা রয়েছে। পাশাপাশি এটি ব্যবস্থাপনার দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের মধ্যে পড়ে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক সময় এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গটির যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব সমাজে অপচয়, দুর্নীতি এবং ধর্মীয় অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ইসলাম কী বলে কুরবানির চামড়া নিয়ে? -

ইসলামে কুরবানির চামড়া বিক্রি করে তার অর্থ নিজের জন্য রাখা হারাম।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করল (অর্থাৎ বিক্রয়লব্ধ মূল্য ভোগ করল) তার কুরবানী হ'ল না (হাকেম, বায়হাক্বী; ছহীহুল জামে' হা/৬১১৮)।
যদি ছাদাক্বার সুযোগ না থাকে, তবে নিজে যে কোন কাজে ব্যবহার করে উপকৃত হ'তে পারবে (আল-মাজমূ' ৮/৪২১)।
আলক্বামা ও মাসরূক (রহঃ) কুরবানীর চামড়াকে পাকিয়ে মুছল্লা বানিয়ে তাতে ছালাত আদায় করতেন (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৪১০৪-০৫)।

চামড়া শুধুমাত্র সদকা করা যাবে। গরিব, মাদরাসা, এতিমখানা, দরিদ্রদের কল্যাণে বা সমাজের জনহিতকর কাজে দান করা যায়। কিন্তু এর মূল্য ভক্ষণ করা নিষিদ্ধ। 
 

আধুনিক বাস্তবতা ও ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ

দেশে প্রতিবছর লাখ লাখ পশু কুরবানি হয়, যার ফলে বিপুল পরিমাণ চামড়া উৎপন্ন হয়। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক সময় চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। দান করার আগেই তা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত না করলে, সদকার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না।

অব্যবস্থাপনার কারণে চামড়া ব্যবসায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এমনকি দানের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি অনৈতিকভাবে তা ব্যবহার করছে, যা ইসলামি আদর্শের বিরোধী।
 

সদকার গ্রহণযোগ্য খাত-

কুরবানির চামড়া সদকা হিসেবে যে খাতে দেওয়া যেতে পারে, তা হলো:

১। কওমি ও আলিয়া মাদরাসা

২। এতিমখানা

৩। দুঃস্থদের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা

৪। জনকল্যাণমূলক ইসলামি প্রতিষ্ঠান
 

তবে নিশ্চিত হতে হবে—প্রাপ্ত চামড়া ব্যবহার হচ্ছে ধর্মীয় ও মানবিক উদ্দেশ্যে, বাণিজ্যিক লোভে নয়।

কুরবানির চামড়া হলো সদকার একটি বড় সুযোগ। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী তা গরিবের হক এবং নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তাই এটি যাতে নষ্ট না হয়, অনৈতিক চক্রের হাতে না পড়ে এবং প্রকৃত প্রয়োজনীদের কাছে পৌঁছায়—সে দায়িত্ব কুরবানিদাতা এবং সমাজের সকল সচেতন মানুষের।

সতর্কতা ও সচেতন ব্যবস্থাপনাই পারে কুরবানির এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গকে ইসলামি আদর্শে পূর্ণতা দিতে।


সম্পর্কিত নিউজ