ঈদের পরের মাংস উৎসব নয়, পুষ্টি ও পরিমিত খাবারের সময়: জনসচেতনতায় ঘাটতি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ঈদুল আজহার মূল উদ্দেশ্য কুরবানি-আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ত্যাগের শিক্ষা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ঈদের পরবর্তী সময়টিকে অনেকেই মাংসভিত্তিক খাবারের একধরনের "উৎসব" হিসেবে নিচ্ছেন, যেখানে অতিরিক্ত খাওয়া, খাদ্য অপচয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর খাদ্যাভ্যাস স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, কুরবানির সময় মানুষের মধ্যে ত্যাগের যে ধর্মীয় ও মানবিক দিকটি থাকে, তা পরবর্তী সময়ে অনিয়ন্ত্রিত ভোগে রূপ নেয়। অথচ ইসলাম বারবার পরিমিত খাওয়া এবং খাদ্যের অপচয় না করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।
➤ খাদ্য নয়, যেন খাওয়ার প্রতিযোগিতা
ঈদের পরদিন থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত অনেক পরিবারেই দুপুর ও রাতের খাবারে থাকে ভাজাপোড়া, মসলা-মাখানো ঝাল ঝোল এবং একাধিক ধরনের মাংস। অনেকে ৩-৪ দিন টানা শুধু মাংস-নির্ভর খাবার খান, যার কারণে গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা বাড়ে।
ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা গৃহবধূ সুলতানা পারভীন বলেন, "প্রতিবারই ঈদের পর পরিবারের সবাইকে নিয়ে ৪-৫ দিন শুধু মাংস রান্না করি। কিন্তু এবার আমি লক্ষ্য করলাম, আমাদের শিশুদের কেউই ঠিকমতো খেতে পারছিল না, বরং হজমে সমস্যা হচ্ছিল।"
➤ চিকিৎসকদের পরামর্শ: 'ভোগ নয়, ভারসাম্য দরকার'
পুষ্টিবিদদের মতে "আমাদের দেশের মানুষ ঈদে এতটাই মাংসখেকো হয়ে যায় যে তারা সবজি, ভিটামিন বা ফাইবার গ্রহণ একদম ভুলে যান। এতে করে পেটের সমস্যা, কোলেস্টেরল বাড়া, এবং ওজন বৃদ্ধি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।"
চিকিৎসকরা - পরিমিত খাওয়ার অভ্যাস এবং প্রতিদিন অন্তত একবেলা ফাইবার বা সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।
➤ ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি: অপচয় ও অতিভোজন হারাম
ইসলামী দৃষ্টিতে খাদ্যের অপচয় ও অতিভোজন (over-eating) উভয়ই নিন্দনীয়। কুরআনুল কারিমে বলা হয়েছে— "তোমরা খাও ও পান করো, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।" —(সূরা আল-আরাফ: ৩১)
ইসলাম খাওয়াকে একটি ইবাদতের অংশ হিসেবে দেখে, যেখানে নিয়ত, পরিমাণ ও পদ্ধতির গুরুত্ব রয়েছে।
মিকদাম ইবন মাদীকারিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মরফূ' হিসেবে বর্ণিত, "মানুষ পেট থেকে অধিক নিকৃষ্ট কোনো পাত্র পূর্ণ করে না। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে এমন কয়েক গ্রাস খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হলে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।" [সহীহ]
➤ সচেতনতা গড়তে মিডিয়া ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খাদ্য-সংক্রান্ত শিক্ষাকে আরও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইউটিউব চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে সহজ ভাষায় পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়।
ঈদুল আজহার শিক্ষা শুধু পশু কুরবানির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একজন মানুষের মধ্যে আত্মসংযম, পরিমিতি ও দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে। তাই কুরবানির পরে যদি আমরা শুধু মাংস খেয়েই শরীরের ক্ষতি করি, তবে আমাদের ঈদের আনন্দটা কতটা টেকসই থাকবে—এ প্রশ্ন আমাদের সকলের জন্যই প্রাসঙ্গিক।তাই প্রতিটি পরিবারের দরকার স্বাস্থ্যকর মেনু, যার মধ্যে থাকবে মাংসের পাশাপাশি সবজি ও শস্যজাত খাবার।