হজের আর্থিক ব্যয় ও হালাল উপার্জনের গুরুত্ব

হজের আর্থিক ব্যয় ও হালাল উপার্জনের গুরুত্ব
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ—একটি ফরজ ইবাদত যা সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য জীবনে অন্তত একবার পালন করা আবশ্যক। কিন্তু এই ফরজ ইবাদতের পেছনে শুধুই শারীরিক প্রস্তুতি নয়, বরং আর্থিক দিকটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—হজের জন্য ব্যবহৃত সম্পদ অবশ্যই হালাল হতে হবে। হারাম উপার্জনের মাধ্যমে করা হজ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।

হজের খরচ ও বাংলাদেশি প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে ২০২৫ সালের হজ প্যাকেজ অনুযায়ী:

⇨ সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যয়: প্রায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা

⇨ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যয়: ৬ লাখ থেকে শুরু করে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত
 

এই বিশাল ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে অনেকে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেন। কিন্তু ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে এই অর্থ হালাল উপায়ে উপার্জিত না হলে হজ যেমন অকার্যকর হয়, তেমনই এর কোনো পরকালীন পুরস্কারও থাকে না।
 

হাদীসের আলোকে হালাল রুজির গুরুত্ব

রাসূলুল্লাহ (সা.) হালাল রুজির ওপর এত গুরুত্বারোপ করেছেন যে তিনি ইবাদতের কবুল হওয়া বা না হওয়ার সঙ্গে তা সরাসরি যুক্ত করেছেন।

১. আবূ বকর আহমদ ইবনুল হুসাইন আল-বায়হাকী, সুনান আল-বায়হাকী 

"ফরয আদায়ের পর হালাল পন্থায় উপার্জনও ফরয।"

২. তাবারানি, আল-কবীর

"যে ব্যক্তি হারাম মাল দিয়ে হজ করে এবং বলে: 'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক', তখন ফেরেশতা তাকে বলে: 'তোমার লাব্বাইক কবুল নয়, তোমার হজ কবুল নয়, কারণ তোমার রিযিক হারাম।'"

৩. মুসনাদে আহমাদ

"যে ব্যক্তি হারাম উপার্জন করে তা দিয়ে হজ করে, সে যেন এক নেক্কার ব্যক্তিকে রক্তে ভেজা কাপড় পরে নামাজ পড়তে দেখে; তার নামাজ যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি তার হজও নয়।"
 

হারাম উপার্জনের কিছু সাধারণ উৎস যা হজকে অগ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে:
⇨  ঘুষ (Bribery): অফিসিয়াল ক্ষমতা ব্যবহার করে ঘুষ গ্রহণ করা

⇨  সুদ (Interest): ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সুদে আয় করা


চুরিকৃত বা জালিয়াতির অর্থ-

⇨ অবৈধ ব্যবসা (যেমন: মাদক, জুয়া, অনৈতিক পণ্যের ব্যবসা)

⇨ ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আয় করা

◑ ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন,

"হজ হলো দেহের সঙ্গে অন্তরের ইবাদত। আর অন্তরের ইবাদত তখনই শুদ্ধ হয় যখন উপার্জন হয় হালাল।"
 

বিশিষ্ট আলেমদের বিভিন্ন বক্তব্য ও ফতোয়া থেকে ভাবানুবাদ -

মুফতি তাকী উসমানী বলেন:

"শরীয়ত অনুসারে হজ তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন তা হালাল অর্থে করা হয়। হারাম উপার্জনে হজ করলে তা শুধুই শারীরিক কষ্ট, এর কোনো আত্মিক মূল্য নেই।"

শায়খ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন:

"হারাম উপার্জন দ্বারা হজে গেলে, হজের বাহ্যিক দিক পালন করা হলেও আখিরাতে এর কোনো প্রতিদান পাওয়া যাবে না।"
 

কোরআনের নির্দেশনা

"হে মুমিনগণ! তোমরা পবিত্র বস্তুসমূহ থেকে আহার কর যা আমি তোমাদেরকে রিযিক স্বরূপ দিয়েছি এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।"[সুরা আল-বাকারা:১৭২ ]
"হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র থেকে খাও এবং সৎকাজ কর, নিশ্চয় আমি তোমরা যা কর সে ব্যাপারে সবিশেষ অবগত।" [সূরা আল-মুমিনুন: ৫১]
 

এ আয়াতের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, শুধু ইবাদত করলেই হবে না, বরং ইবাদতের উপায়-উপকরণও পবিত্র ও বৈধ হওয়া আবশ্যক।
 

ব্যক্তিগত করণীয়

⇨ হালাল রুজি নিশ্চিত করা: হজের আগে নিজের উপার্জনের উৎস বিশ্লেষণ করা উচিত।

⇨ হারাম উৎস থেকে মুক্তি: যদি কোনো সন্দেহজনক বা হারাম উৎস থেকে আয় হয়ে থাকে, সেটি পরিহার করে তাওবা করতে হবে।

⇨ পরিবার ও সন্তানের হালাল খরচ নিশ্চিত করা: হজে গমন শুধু নিজের ইবাদত নয়, পরিবারকেও হালাল ভিত্তিতে চলার দৃষ্টান্ত দেওয়া।

হজ একটি পবিত্রতম ইবাদত। এর শর্ত শুধু শারীরিক সক্ষমতা নয়, বরং আর্থিক দিকটিও পরিষ্কারভাবে শুদ্ধ হতে হবে। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম উপার্জন দিয়ে হজ করলে সেটি আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না, বরং তা হতে পারে গোনাহের কারণ।

আমরা যেন হালাল উপার্জন নিশ্চিত করে হজ পালন করি—এটাই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা। আত্মার বিশুদ্ধতার মাধ্যমে হজের মতো পবিত্র ইবাদতে যেন আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি—এই দোয়া সবার জন্য।
 

তথ্যসূত্র:

-সুনান আল-বায়হাকী 

-তাবারানি আল-কবীর

-মুসনাদে আহমাদ

-ইসলামী ফিকহ কাউন্সিল

-বাংলাদেশ হজ অফিস

-ইসলামিক স্কলার্স' ফতওয়া (Darul Ifta)


আপনার হজ হোক হালাল সম্পদে, পবিত্র নিয়তে, এবং কবুল ইবাদতের মাধ্যমে—ইনশাআল্লাহ।


সম্পর্কিত নিউজ