আরাফার দিন: হজের কেন্দ্রবিন্দু ও দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
হিজরী ৯ জিলহজ-আরাফার দিন, যা হজের মূল রুকন। হজে 'ওকুফে আরাফা' (আরাফার ময়দানে নির্দিষ্ট সময়ে অবস্থান) ফরজ। এ ছাড়া এ দিনটি গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্যও দোয়া, ইবাদত ও ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ সুযোগ এনে দেয়। এই দিন শুধু হজযাত্রীদের জন্য নয়-সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। এ দিনকে বান্দা-প্রভুর সংলাপের দিন, ক্ষমা প্রার্থনার দিন, এবং আত্মশুদ্ধির দিন বলা হয়।
আরাফার দিন: আল্লাহর অগণিত বান্দা মুক্তির দিন
এক আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিবস আরাফা দিবস। আল্লাহ তাআলা, আরাফা দিবসে, তাঁর বান্দাদেরকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, 'এমন কোনো দিবস নেই যেখানে আল্লাহ তাআলা আরাফা দিবস থেকে বেশি বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এবং আল্লাহ নিশ্চয়ই নিকটবর্তী হন, ও তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, বলেন—ওরা কী চায়? [মুসলিম : হাদিস নং ১৩৪৮]
অন্য এক হাদিসে এসেছে, 'আল্লাহ তাআলা আরাফায় অবস্থানরতদেরকে নিয়ে আকাশবাসীদের সাথে গর্ব করেন। তিনি বলেন, আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা আমার কাছে এসেছে এলোথেলো ও ধুলায় আবৃত অবস্থায়। [মুসনাদে আহমদ : ২/২২৪]
এমন মর্যাদাপূর্ণ দিনে কান্না, তাওবা, ইস্তিগফার ও খাঁটি মনে দোয়া আল্লাহর কাছে সরাসরি কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
আরাফার দিনে দোয়ার বিশেষতা
এই দিনটি দোয়া কবুলের সর্বোত্তম সময় বলে ঘোষণা দিয়েছেন নবী ﷺ।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
"সবচেয়ে উৎকৃষ্ট দোয়া হলো আরাফার দিনে করা দোয়া। আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ যা বলেছেন তাই সবচেয়ে মঙ্গলজনকঃ
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
এই দোয়াটিকে "তাওহিদের সারাংশ" বলা হয়। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর একত্ব, মালিকানা, প্রশংসা ও সর্বশক্তিমানের স্বীকৃতি দেয়—যা দোয়া কবুলের পথ সুগম করে।
আল্লাহর ভয়ে অশ্রুপাত: জান্নাতের সুসংবাদ
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, "রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলতে শুনেছি যে, জাহান্নাম স্পর্শ করবে না দুটি চোখ–যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে আর যে চোখ আল্লাহর পথে পাহারা দানে বিনিদ্র রজনী যাপন করে। "
তিরমিজি, হাদীস: ১৬৩৯ | সহীহ হাদীস
আরাফার দিন আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণ ও চোখের অশ্রু জান্নাতের বড় মাধ্যম হতে পারে।
হজে না গেলেও এই দিনে রোজা ও ইবাদত করলে ফজিলত অপরিসীম
হাজিদের জন্য আরাফার দিবসে রোজা রাখা মাকরুহ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বিদায় হজ্জের সময় আরাফা দিবসে রোজা রাখেননি। বরং সবার সম্মুখে তিনি দুধ পান করেছেন।[ মুসলিম : হাদিস নং ১১২৩-১১২৩ ]
ইকরামা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, "আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর বাড়িতে প্রবেশ করে আরাফা দিবসে আরাফার ময়দানে থাকা অবস্থায় রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)আরাফার ময়দানে আরাফা দিবসের রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।"
[মুসনাদে আহমদ: ২/৩০৪, আহমদ শাকের বলেছেন : হাদিসটির সনদ শুদ্ধ) ]
তবে যারা হজে নেই, তারা ঘরে থেকেও এই দিনটি রোজা রেখে, দোয়া করে, কুরআন তিলাওয়াত ও ইবাদতের মাধ্যমে অতুলনীয় সওয়াব অর্জন করতে পারেন।
রাসূল ﷺ বলেন,
"আরাফার দিনের রোজা (হাজির জন্য নয়) পূর্ববর্তী এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করিয়ে দেয়।" [সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬২]
এই রোজা হালাল উপার্জন, আত্মিক উন্নয়ন এবং গুনাহ মোচনের অন্যতম মাধ্যম।
আরাফার দিনে সুন্নাহ ইবাদতসমূহ
◑ হজে না যাওয়া মুসলিমদের জন্য করণীয়:
⇨ আরাফার রোজা রাখা দোয়া ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর নিকটতা অর্জন
⇨ বেশি বেশি তাসবিহ, তাহমিদ, তাকবির ও তাহলীল পাঠ
⇨ দরূদ শরীফ পাঠ
⇨ কুরআন তিলাওয়াত
⇨ মাগরিব পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে দোয়া ও ইস্তিগফার
আরাফার দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের সাগর, যার প্রতিটি ঢেউয়ে গুনাহ মাফ, দোয়া কবুল ও জান্নাতের আমন্ত্রণ। এই দিন উপলক্ষে প্রতিটি মুসলমানের উচিত নিজেকে পরিশুদ্ধ করা, হৃদয় খুলে আল্লাহর দরবারে ফেরা, চোখের পানি ফেলে তাঁর কাছে প্রার্থনা করা।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: জাল হাদীস, অতিরঞ্জিত কাহিনি বা ভিত্তিহীন দোয়ার চর্চা থেকে বিরত থাকুন। হাদীস ও কুরআনের সহীহ তথ্যের আলোকে ইবাদত করুন।