নিউট্রিনো উৎপত্তি ঘটে সূর্যের অভ্যন্তরীণ পারমাণবিক বিক্রিয়া, সুপারনোভা বিস্ফোরণ, এমনকি মহাবিশ্বের জন্মের পর প্রথম কয়েক সেকেন্ডের সময়। প্রতি সেকেন্ডে বিলিয়ন বিলিয়ন নিউট্রিনো আমাদের পৃথিবীর মধ্য দিয়ে নিঃশব্দে প্রবাহিত হয়, কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ খুবই সীমিত। এর কারণ হলো নিউট্রিনোর ইন্টারঅ্যাকশন খুবই দুর্বল-অর্থাৎ তারা সাধারণ কণা বা পদার্থের সাথে প্রায়ই সংঘর্ষ ঘটায় না।

নিউট্রিনোর সবচেয়ে চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য হলো এর "ফ্লেভার" পরিবর্তন করার ক্ষমতা-অর্থাৎ তারা তিন রকমের নিউট্রিনোর মধ্যে রূপান্তর করতে পারে। এই নিউট্রিনো অসিলেশন নামের ঘটনা সেদিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিউট্রিনোর ভর আছে, যা স্ট্যান্ডার্ড মডেলের এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এই অতি ক্ষুদ্র ভর প্রকৃতপক্ষে মহাবিশ্বের পদার্থবিজ্ঞানের কিছু মৌলিক ধারণাকে পরিবর্তন করছে।

বিশ্বের নানা দেশে গাঢ় পাহাড়ের নিচে, গভীর সমুদ্রের তলে অথবা বরফের ভেতর বসানো হয়েছে বিশেষ ধরনের নিউট্রিনো ডিটেক্টর। এসব যন্ত্রপাতি এতটাই সংবেদনশীল যে তারা সূর্য থেকে বা দূরবর্তী মহাজাগতিক উৎস থেকে আসা নিউট্রিনো ধরতে সক্ষম। এ গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের গঠন, তার উত্স এবং তার বিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করছেন।

নিউট্রিনো গবেষণা একদিন আমাদের মহাবিশ্বের অদৃশ্য অন্ধকার শক্তি বা ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি সম্পর্কে গভীরতর জ্ঞান দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি মহাবিশ্বের সৃষ্টির মুহূর্ত এবং তার পরবর্তী বিকাশের রহস্য উদঘাটনে নতুন দিক নির্দেশ করবে।

নিউট্রিনো নিয়ে চলমান এই বৈজ্ঞানিক অভিযান শুধু একটি মৌলিক কণা খোঁজার প্রচেষ্টা নয়, এটি এক বিশাল মহাজাগতিক রহস্যের গঠন এবং আমাদের অস্তিত্বের গভীর ব্যাখ্যা খোঁজার যাত্রা। সেই দিক থেকে নিউট্রিনো আজকের পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং চ্যালেঞ্জিং অধ্যায়গুলোর একটি।