কেন কেউ ধীরে, কেউ দৌড়ে বাড়ে?-গাছের বৃদ্ধির রহস্য উদ্ঘাটন করল বিজ্ঞান

কেন কেউ ধীরে, কেউ দৌড়ে বাড়ে?-গাছের বৃদ্ধির রহস্য উদ্ঘাটন করল বিজ্ঞান
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

প্রতিদিন আমাদের চারপাশে গাছেরা বাড়ছে—কেউ শান্ত ধীরগতিতে, আবার কেউ দৌড়ে দৌড়ে! কিন্তু কেন একই প্রকৃতির মধ্যে এত বড় পার্থক্য? গাছের বৃদ্ধির হার বা দ্রুততা বিজ্ঞানীদের জন্যও একটি চমক লাগিয়ে দেওয়া রহস্য।

একটা বাঁশের গাছ দিনে প্রায় ১ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে, আর অন্যদিকে একটি ওক গাছের বৃদ্ধি হয় অনেক ধীর। এর পেছনে রয়েছে এক জটিল বৈজ্ঞানিক কারণ, যা বোঝার জন্য আমাদের প্রথমে দেখতে হবে গাছের জেনেটিক প্রোফাইল, মাটির পুষ্টি, জলবায়ু এবং পরিবেশগত চাপ।
 

জেনেটিক কোডেই লুকিয়ে বৃদ্ধি গতি

প্রতিটি গাছের ডিএনএ-তে লুকিয়ে থাকে বৃদ্ধির গতি নির্ধারণের নকশা। দ্রুতবর্ধনশীল গাছের কোষ বিভাজন ও প্রসারণের হার অনেক বেশি। ইউক্যালিপটাস বা বাঁশের মতো গাছ দ্রুত বৃদ্ধি করে কারণ তাদের কোষ দেয়ালের কাঠামো লচকদার এবং দ্রুত বিভাজন করে। অন্যদিকে ওক বা শিমুল গাছের কাঠ বেশি ঘন ও শক্ত হওয়ায় বৃদ্ধি ধীর হয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি টেকসইতা বেশি।


সূর্যের আলো এবং জলবায়ুর গুরুত্ব

গাছের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত আলো অত্যন্ত জরুরি। ফটোসিন্থেসিসের মাধ্যমে গাছ আলো থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, যা বৃদ্ধির মূল উৎস। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয় কারণ এখানে আলো ও তাপমাত্রা স্থায়ী এবং পর্যাপ্ত। শীতল অঞ্চলে গাছের বৃদ্ধির ঋতুচক্র থাকে, ফলে বৃদ্ধি মৌসুমভিত্তিক এবং ধীর।


মাটি ও পুষ্টি: গাছের খাদ্য ভান্ডার

মাটির ধরন, পিএইচ মাত্রা, এবং পুষ্টি উপাদানের প্রাপ্যতা গাছের বৃদ্ধিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। নাইট্রোজেন, ফসফরাস, এবং পটাশিয়ামের মতো উপাদানগুলো গাছের দ্রুত বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকর কাঠামোর জন্য অপরিহার্য। বালি মিশ্রিত দোআঁশ মাটি দ্রুত জল নিষ্কাশন করে, যা দ্রুতবর্ধনশীল প্রজাতির জন্য উপযোগী।


পরিবেশগত চাপ ও অভিযোজন

গাছেরা কেবল মাত্র পরিবেশের অনুকূলতাকেই নয়, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জকেও মাথায় রেখে নিজেকে মানিয়ে নেয়। বনধ্বংস, আগুন বা খরার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর দ্রুতবর্ধনশীল গাছেরা দ্রুত পুনর্জন্ম ঘটাতে সক্ষম। অন্যদিকে, ধীরবর্ধনশীল গাছেরা শক্ত কাঠের কারণে দীর্ঘজীবী এবং পরিবেশের স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে।


গবেষণার নতুন দিগন্ত

আধুনিক প্রযুক্তি যেমন স্যাটেলাইট ইমেজিং এবং ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে গাছের বৃদ্ধি নিরীক্ষণ এখন আরও সহজ ও নির্ভুল হয়েছে। বিজ্ঞানীরা গাছের বৃদ্ধির হার বুঝে বনায়ন পরিকল্পনা করছেন, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো যায় এবং জীববৈচিত্র্য বজায় থাকে।

গাছের বৃদ্ধির গতি শুধু একটা সংখ্যা নয়, এটি প্রকৃতির নানাবিধ বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন। জেনেটিক্স, মাটি, জলবায়ু এবং অভিযোজন—এই চারটি উপাদান একসাথে মিলে নির্ধারণ করে কোন গাছ কত দ্রুত বা ধীরগতিতে বড় হবে। এই তথ্য আমাদের বনসংরক্ষণ ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।
 

তথ্যসূত্র:
-উদ্ভিদবিজ্ঞান
- পরিবেশতত্ত্ব এবং স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত গবেষণা


সম্পর্কিত নিউজ