বয়স বাড়ার সঙ্গে কীভাবে মস্তিষ্ক ও মন পরিবর্তিত হয়, জানুন এক বৈজ্ঞানিক ভ্রমণে

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানুষের জীবনের সঙ্গে সঙ্গে বয়স বাড়ে, আর মনের ভাব-চিন্তাভাবনাও বদলে যায়। কিন্তু এই পরিবর্তনগুলো কীভাবে ঘটে? শুধু কি স্মৃতি হারানো বা মনোযোগ কমে যাওয়ার ঘটনা? না, গবেষণার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায় বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের মনের একটি গভীর ও জটিল রূপান্তর ঘটে, যা অনেকটাই অনুপ্রেরণামূলক এবং আশার বার্তা দেয়।
মস্তিষ্কের গঠন ও কাজের বৈজ্ঞানিক পরিবর্তন
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে মস্তিষ্কের কিছু অংশ, যেমন প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিকল্পনার জন্য দায়ী) এবং হিপোক্যাম্পাস (স্মৃতির কেন্দ্রীয় অংশ), ধীরগতি বা আকারে কিছুটা হ্রাস পায়। কিন্তু এখানে আকর্ষণীয় দিক হলো, মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশ যেমন অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট কর্টেক্স ও অ্যামিগডালা বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক বোঝাপড়ায় সাহায্য করে।
বুদ্ধিমত্তার দ্বৈত প্রকৃতি
বুদ্ধিমত্তার দুটি মূল দিক — তরল বুদ্ধিমত্তা এবং সঞ্চিত বুদ্ধিমত্তা — এর পরিবর্তন বয়সের সঙ্গে ভিন্ন রকম। তরল বুদ্ধিমত্তা, যা নতুন সমস্যা দ্রুত সমাধান ও নতুন তথ্য শিখতে সাহায্য করে, ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। তবে সঞ্চিত বুদ্ধিমত্তা — জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা — বয়স বাড়ার সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। ফলে বড় বয়সের মানুষরা সমস্যা সমাধানে অধিক গভীরতা ও বিচক্ষণতা প্রদর্শন করেন।
আবেগ ও মানসিক স্থিতিশীলতার উন্নতি
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আবেগগত স্থিরতা ও সংযম বাড়ে। তরুণ বয়সে প্রবল উত্তেজনা ও আবেগপ্রবণতা থাকলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও মানসিক স্থিতিশীলতা বেড়ে যায়। এই কারণে, অনেক বয়স্ক ব্যক্তি জীবনের চাপ ও মানসিক উত্তেজনায় তরুণদের তুলনায় অনেক বেশি স্থিতপ্রজ্ঞ হয়।
স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগের পরিবর্তন
স্বল্পমেয়াদি স্মৃতি (যা সাম্প্রতিক তথ্য সংরক্ষণ করে) বয়স বাড়ার সঙ্গে ধীরে ধীরে কমতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতির ধারনক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অটুট থাকে। মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ক্ষমতাও কিছুটা হ্রাস পেতে পারে, তবে নিয়মিত মানসিক ব্যায়াম ও সামাজিক মেলামেশা এই ধীরগতিকে অনেকাংশে রোধ করে।
মস্তিষ্কের পুনর্গঠন ও অভিযোজন ক্ষমতা
অবিশ্বাস্য হলেও মস্তিষ্ক জীবনের যেকোনো পর্যায়েই নিজেকে পুনর্গঠন ও নতুন সংযোগ গড়ে তোলার ক্ষমতা রাখে, যা 'স্নায়ুবৈচিত্র্য' নামে পরিচিত। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে বয়স্ক মানুষও নতুন কিছু শিখতে পারে, মস্তিষ্কের ক্ষতিপূরণ করতে পারে, এবং মানসিক দক্ষতা বাড়াতে পারে।
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও মস্তিষ্কের সুস্থতা
গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন যেমন নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চর্চা ও সামাজিক যোগাযোগ বয়স বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য রক্ষা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সামগ্রিকভাবে, বয়সের সঙ্গে মানুষের মনের পরিবর্তন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে কিছু মানসিক ক্ষমতা কমলেও অনেক ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতা, স্থিতিশীলতা ও বুদ্ধিমত্তা বাড়ে। এটি জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে এবং একধরণের মানসিক প্রজ্ঞা এনে দেয়, যা তরুণ বয়সের তুলনায় অনেক বেশি গভীর ও বিচক্ষণ।
বয়স বাড়লেও মস্তিষ্ক ক্ষয়ে যায় না, বরং তা নতুনভাবে বিকশিত হয়। বুদ্ধি, আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক স্থিতিশীলতার উন্নতি বয়স্কদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। জীবনযাত্রার সচেতন পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা এই পরিবর্তনগুলোকে আরও সুন্দর ও সুস্থ করে তুলতে পারি।