মহাবিশ্বে নতুন দিগন্ত: এক্সোপ্ল্যানেট ও হ্যাবিটেবল জোনে প্রাণের সন্ধান

মহাবিশ্বে নতুন দিগন্ত: এক্সোপ্ল্যানেট ও হ্যাবিটেবল জোনে প্রাণের সন্ধান
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা আমাদের সেই অনন্ত প্রশ্নের কাছে আরও কাছে নিয়ে এসেছে — এই বিশাল মহাবিশ্বে আমরা কি একা? মানুষ চিরকাল ভাবেছে, পৃথিবীর মতো আর কোনো গ্রহ কি সত্যিই রয়েছে? সম্প্রতি এই রহস্য উদঘাটনে জোরালো ভূমিকা নিয়েছে "এক্সোপ্ল্যানেট" (Exoplanet) ও "হ্যাবিটেবল জোন" (Habitable Zone) নিয়ে গবেষণা। চলুন দেখি কীভাবে এরা মানব সভ্যতার ভবিষ্যত নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।

এক্সোপ্ল্যানেট: পৃথিবীর বাইরে অজানা বিশ্ব

এক্সোপ্ল্যানেট হল এমন গ্রহ যা আমাদের সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত এবং অন্য কোনো নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে। গত তিন দশকে মহাকাশ দূরবীন ও টেলিস্কোপের উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে হাজার হাজার এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কৃত হয়েছে।
 

হ্যাবিটেবল জোন: জীবনধারণের স্বর্ণাঞ্চল

"হ্যাবিটেবল জোন" বলতে বোঝায় এমন একটি সীমিত দূরত্বের এলাকা যেখানে নক্ষত্রের তাপমাত্রা পানি তরল অবস্থায় থাকার জন্য উপযুক্ত থাকে। পানি ছাড়া জীবন কল্পনাই করা কঠিন। বিজ্ঞানীরা বিশেষ করে এ অঞ্চলের গ্রহগুলোতে প্রাণের সম্ভাবনা বেশি মনে করেন।
 

আবিষ্কারের পদ্ধতি: আধুনিক যন্ত্রের বিস্ময়

এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারে প্রধান দুটি পদ্ধতি:

◑ ট্রানজিট পদ্ধতি: যখন কোনো গ্রহ তার নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যায়, তখন নক্ষত্রের আলো সাময়িকভাবে কমে যায়। এই আলো কমে যাওয়ার মাত্রা বিশ্লেষণ করে গ্রহের আকার, কক্ষপথ ও গঠন জানা যায়।

◑ রেডিয়াল ভেলোসিটি (ডপলার) পদ্ধতি: গ্রহের আকর্ষণে নক্ষত্র একটু কাঁপে। নক্ষত্রের এই কম্পন দেখে তার চারপাশে গ্রহের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়।
 

সাম্প্রতিক উদ্ভাবন ও মহাকাশ প্রযুক্তি

James Webb Space Telescope (JWST) এর মত অত্যাধুনিক দূরবীন মহাবিশ্বের গভীরে গিয়ে গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করছে। JWST এর সাহায্যে আমরা এখন গ্রহের বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের উপস্থিতি যেমন অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড কিংবা মিথেন আছে কিনা তা দেখতে পারি, যা জীবনধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এছাড়া TESS স্যাটেলাইট সৌরজগতের বাইরে ছোট থেকে বড় গ্রহ খুঁজছে দ্রুতগতি পদ্ধতিতে।
 

পৃথিবীর অনুরূপ কিছু গ্রহের তথ্য

◑ Kepler-452b: এই গ্রহকে বলা হয় 'সুপার আর্থ'। এটি আমাদের সূর্যের মত একটি নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরে এবং হ্যাবিটেবল জোনে অবস্থান করে। পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবং আকারে পৃথিবীর তুলনায় একটু বড়, কিন্তু বাসযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

◑ TRAPPIST-1 সিস্টেম: এই নক্ষত্রের চারপাশে সাতটি পৃথিবীর মাপের গ্রহ আছে, যার তিনটি হ্যাবিটেবল জোনে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন এখানে জীবনের অনুকূল পরিবেশ থাকতে পারে।

◑ TOI-700 d: এটি প্রথম বার ধরা পড়া গ্রহ যার বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের সম্ভাবনা রয়েছে, যা প্রাণের জন্য আশার আলো।
 

বিজ্ঞান ও মানবতার জন্য গুরুত্ব

এক্সোপ্ল্যানেট ও হ্যাবিটেবল জোন নিয়ে গবেষণা শুধুমাত্র মহাকাশ বিজ্ঞানের বিষয় নয়; এটি মানব সভ্যতার অস্তিত্ব ও ভবিষ্যত নির্ধারণের প্রশ্নও বটে। পৃথিবীর বর্ধিত জনসংখ্যা, পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অন্য গ্রহে বসবাসযোগ্যতা আমাদের দ্বিতীয় আশ্রয়স্থল হতে পারে।
 

ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট

বিশ্বের বড় বড় মহাকাশ সংস্থা যেমন NASA, ESA ও ISRO ভবিষ্যতে মানুষের বহিঃগ্রহ বসতি স্থাপনের পরিকল্পনায় রয়েছে। এক্সোপ্ল্যানেট সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আরও নিশ্চিত হব কোন গ্রহে মানুষের বসতি সম্ভব।


এই মহাবিশ্বের বিশালতায় আমাদের ছোট্ট পৃথিবী একা নয়, এমন আশায় বিজ্ঞানীরা দিনরাত কাজ করছেন। এক্সোপ্ল্যানেট ও হ্যাবিটেবল জোনের সন্ধানে আমরা হয়তো খুব শিগগিরই এমন কোনো গ্রহ খুঁজে পাবো, যেখান থেকে নতুন জীবন শুরু করা সম্ভব হবে। মহাকাশের এই নতুন অভিযান মানব সভ্যতার জন্য এক আশার প্রদীপ।


সম্পর্কিত নিউজ