ব্রণ সমস্যার পেছনের আসল কথা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
এক সময় কিশোর বয়সের একটি স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবেই দেখা হতো ব্রণকে। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান জানাচ্ছে – ব্রণ (Acne Vulgaris) একটি জটিল প্রদাহজনিত ত্বকের রোগ, যার শিকড় আমাদের হরমোন, ইমিউন সিস্টেম, খাদ্যাভ্যাস এবং মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বের প্রায় ৮৫% কিশোর-কিশোরী কোনও না কোনও পর্যায়ে ব্রণের সমস্যায় ভোগে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ব্রণের প্রাদুর্ভাব এখন আর অস্বাভাবিক নয়।
কী ঘটে ত্বকের নিচে? - ব্রণের মূল উৎপত্তি হয় চামড়ার নিচে থাকা সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে। এই গ্রন্থিগুলো প্রাকৃতিকভাবে সেবাম নামক একধরনের তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে, যা ত্বককে আর্দ্র রাখে। তবে যখন এই সেবাম অতিরিক্ত হয়ে নালিতে (ফলিকল) জমে যায় এবং মৃত কোষ দিয়ে ব্লক হয়ে পড়ে, তখনই শুরু হয় সমস্যা।
এর সঙ্গে যুক্ত হয় Cutibacterium acnes ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া সেখানে জমে থাকা সেবামকে পচিয়ে ফেলে, ফলে তৈরি হয় প্রদাহ, লালচে ফোঁড়া ও পুঁজপূর্ণ ব্রণ।
হরমোন ও ব্রণের অদৃশ্য সম্পর্ক- অ্যান্ড্রোজেন হরমোন (বিশেষত টেস্টোস্টেরন) সেবাসিয়াস গ্রন্থিকে অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদনের জন্য উদ্দীপিত করে। এ কারণেই বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের তারতম্যের কারণে ব্রণের প্রকোপ বেড়ে যায়। নারীদের ক্ষেত্রে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) এর মতো হরমোনজনিত সমস্যা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের পরিবর্তন বা প্রেগন্যান্সির সময়ও ব্রণের মাত্রা বাড়তে দেখা যায়।
চাপ, ঘুম ও মানসিক অবস্থা: এক চক্রবুহ্য
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মানসিক চাপ ব্রণকে আরও জটিল করে তোলে। কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়লে সেবাম উৎপাদন বেড়ে যায় এবং ত্বকের ইমিউন প্রতিক্রিয়াও দুর্বল হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে, ঘুমের অভাব ও অনিয়মিত জীবনযাত্রা ব্রণের পুনরাবৃত্তিকে ত্বরান্বিত করে।
খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা - আগে ধারণা ছিল, চকোলেট বা তেলমাখা খাবার খেলে ব্রণ হয়। এখন বলা হচ্ছে, শুধু ফ্যাট নয়—উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার (যেমন: হোয়াইট ব্রেড, ক্যান্ডি, কোল্ড ড্রিংকস) ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা আবার অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের সক্রিয়তা বাড়ায়। এর ফলেও সেবাম বৃদ্ধি ঘটে।
প্রসাধনী, আবহাওয়া ও জীবনযাত্রা-
অতিরিক্ত মেকআপ, বিশেষ করে নন-কোমেডোজেনিক নয় এমন প্রসাধনী ছিদ্র বন্ধ করে দিতে পারে। ধুলাবালি, দূষণ, আর্দ্র আবহাওয়া বা অতিরিক্ত শুষ্কতা-সবই ব্রণের ট্রিগার।
নিয়মিত মুখ ধোয়া, উপযুক্ত স্কিনকেয়ার রুটিন এবং ব্যাকটেরিয়াবিরোধী উপাদান সমৃদ্ধ ফেসওয়াশ ব্যবহারে সাময়িক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
✔ সমাধান কোথায় ??
সমাধান একক নয়, বরং বহুমাত্রিক!!
১। হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করা
২। পরিমিত ঘুম ও চাপ নিয়ন্ত্রণ
৩। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ (ফাইবার, জিঙ্ক, ওমেগা-৩)
৪। ত্বক অনুযায়ী বিজ্ঞানভিত্তিক পরিচর্যা
৫। প্রয়োজনে ডার্মাটোলজিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ
ব্রণ শুধু একটি 'রূপগত ত্রুটি' নয়, এটি শরীরের ভেতরের জটিলতার বহিঃপ্রকাশ। একে হালকাভাবে না নিয়ে, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সৌন্দর্যের বাইরেও, ত্বকের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হওয়া আজকের সময়ের বাস্তবতা।