শুধু নির্বাচন নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেট তিনটি: লন্ডনে ড. ইউনূস

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
লন্ডনের চ্যাথাম হাউজ থিঙ্কট্যাঙ্কে বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন-তাদের সরকারের লক্ষ্য শুধুমাত্র একটি নির্বাচন আয়োজন নয়। বরং নির্বাচন আয়োজনের আগে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে।
প্রথমত, তিনি বলেছেন-রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের আওতায় আনা হবে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে এই কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
দ্বিতীয় ম্যান্ডেট হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও তার আগের গুম, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনার বিচার। দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তৃতীয় এবং শেষ দায়িত্ব হলো-একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা, যাতে দেশের তরুণ প্রজন্ম প্রথমবারের মতো স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।
ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটি এমন নির্বাচন যেখানে জনগণের ইচ্ছার প্রকৃত প্রতিফলন ঘটবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই নির্বাচন হবে স্মরণকালের সবচেয়ে স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর নির্বাচন।”
অনুষ্ঠানে তিনি জানান, নির্বাচন শেষে নতুন সরকার দায়িত্ব নিলে অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ আর প্রশাসনে যুক্ত থাকবেন না। সেইসাথে, তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চার্জশিট দেওয়ার প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন, এবং তার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের কথাও নিশ্চিত করেন।
তবে এই বক্তব্য ঘিরে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। লন্ডনভিত্তিক বিশ্লেষক প্রিয়জিত দেবসরকার বলেন, “একটি প্রধান রাজনৈতিক দলকে প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে উৎসবমুখর নির্বাচন কীভাবে সম্ভব, সেই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব আসেনি।” এছাড়াও, “জুলাই গণহত্যার বিচার করার ম্যান্ডেট অন্তর্বর্তী সরকারকে কে দিয়েছে, সেটিও অনির্দিষ্ট” বলে মত দেন তিনি।
চ্যাথাম হাউজের এই আয়োজনে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকে অংশ নেন। অনুষ্ঠান শেষে ইউনূস সমর্থকরা কিছু সময়ের জন্য স্লোগান দেন। তবে সকাল থেকে যাঁরা তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন, পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
এই সফরের মধ্য দিয়ে ড. ইউনূস স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন-এই অন্তর্বর্তী সরকার শুধু একটি নির্বাচন করিয়ে দায়িত্ব শেষ করবে না, বরং বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের কাঠামোগত সংকট দূর করে একটি নতুন রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরির লক্ষ্যেই এগোচ্ছে।