স্নেক প্ল্যান্টের অক্সিজেন বিপ্লব ও বংশবিস্তারের পদ্ধতি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
একটি গাছ, যার পরিচর্যার প্রয়োজন প্রায় নেই বললেই চলে। তবু সে দিনে-রাতে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখে, ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে, এমনকি শহুরে জীবনে ছাদবাগান বা ইনডোর ডেকোরের অন্যতম ভরসাও হয়ে উঠেছে। গাছটির নাম Snake Plant, যার বৈজ্ঞানিক নাম Dracaena trifasciata (পূর্বে Sansevieria trifasciata)।
একে বাংলায় অনেকে চেনেন 'নাগিন গাছ' নামে, এর সরু, তীক্ষ্ণ, ডানার মতো পাতা ও খাঁজকাটা সবুজাভ-হলুদ রঙের ছোপ দেখে। কিন্তু এর বৈশিষ্ট্য শুধু চেহারায় সীমাবদ্ধ নয়—এর বংশবিস্তারের পদ্ধতি এবং পরিবেশগত অবদান এতটাই চমকপ্রদ যে, আধুনিক বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে গবেষণাগারে এখন Snake Plant নিয়ে আগ্রহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
Snake plant-এর propagation বা বংশবিস্তার একটি শিক্ষণীয় উদ্ভিদবিজ্ঞান চর্চা—যা কম খরচে, কম যত্নে এবং সীমিত জায়গাতেও সম্ভব। নিচে বিস্তারিতভাবে তিনটি প্রধান উপায় তুলে ধরা হলো:
১। Rhizome Division – মূল কাণ্ড ভাগ করে নতুন জীবন
Snake plant-এর নিচের দিকের মাটি ঢাকা ঘনকাণ্ড—যাকে Rhizome বলা হয়—সেখান থেকে আলাদা করে ভাগ করলে প্রতিটি অংশই নতুন গাছে রূপ নিতে পারে।
⇨ সময়: বসন্ত বা গ্রীষ্মে করলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়
⇨ উপকার: মূল গাছের জেনেটিক গুণ বজায় থাকে
২। Cutting – একটি পাতাই যথেষ্ট
Snake plant-এর পাতা থেকে তৈরি হয় একাধিক নতুন গাছ, শুধুমাত্র সঠিক কৌশলে কেটে লাগালেই।
⇨ পদ্ধতি: পাতার নিচের দিক ৪–৬ ইঞ্চি কেটে শুকিয়ে, পরে পানিতে বা কোকোপিটে বসাতে হয়
⇨ জৈব সার ব্যবহার করলে গাছ আরও দ্রুত বাড়ে
বিশেষ সতর্কতা: ভুলদিক দিয়ে কেটে রোপণ করলে শিকড় জন্মে না, কারণ পাতার উপরের দিক ভুলভাবে নিচে দিলে বিপরীতমুখী গ্রোথ হয়।
৩। Offsets বা "Pups" – মায়ের পাশে সন্তান
মা গাছের গোড়া থেকে যে ছোট গাছ বেরোয়, তাকে আলতো করে তুলে নতুন টবে বসিয়ে দিলে সেটাই হয়ে ওঠে পূর্ণাঙ্গ নতুন Snake plant।
⇨ সহজ পদ্ধতি: বাগান শুরুর জন্য নবীনদের জন্য এটি সবচেয়ে উপযোগী।
CAM Photosynthesis: অক্সিজেন দানকারী রাত্রিকালীন যোদ্ধা
বেশিরভাগ গাছ রাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে, কিন্তু Snake plant ব্যতিক্রম। এটি CAM (Crassulacean Acid Metabolism) প্রক্রিয়ায় রাতে অক্সিজেন নির্গত করে। ফলে:
⇨ বেডরুমের জন্য এটি একটি আদর্শ ইনডোর প্ল্যান্ট
⇨ ঘুমের গুণগত মান উন্নত করতে সহায়ক
⇨ অ্যাজমা ও ঘরের ইনডোর অ্যালার্জি সমস্যা কমাতে সাহায্য করে
সুবিধা সমূহ:
⇨ কম পানি চায় – সপ্তাহে একবারই যথেষ্ট
⇨ অল্প আলোতেও বাঁচে – জানালার পাশে বা কোনায়
⇨ পোকামাকড় প্রতিরোধে সহায়ক
⇨ শিকড় বা পাতায় জীবাণুনাশক উপাদান থাকে (বিশেষত ফাঙ্গাল রোগে প্রতিরোধী)
⇨ পাত্রে বা জলীয় মাধ্যমে (Hydroponics) চাষ সম্ভব
Snake Plant: নগর কৃষির অন্যতম সম্ভাবনা
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ছাদবাগান ও ইনডোর গার্ডেনের জনপ্রিয়তার পেছনে Snake plant একটি উল্লেখযোগ্য নাম। অনেক নার্সারি এখন এই গাছ উৎপাদন ও বিক্রি করছে কাটিং/পাপ থেকে। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এটি কম খরচে লাভজনক কৃষি ব্যবসার একটি নতুন পথ।
⇨ Green Interior Movement-এর চালিকা শক্তি
⇨ ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের কাছে Snake plant এখন "living décor"
⇨ রেস্টুরেন্ট, স্পা, হাসপাতাল লবিতে ব্যবহৃত হয় শোভা ও বাতাস বিশুদ্ধ রাখার জন্য
⇨ Hydroponic wall garden বা 'বায়োওয়াল' তৈরিতেও এই গাছ ব্যবহারযোগ্য
Snake Plant যেন প্রাকৃতিক প্রযুক্তি-যা নিঃশব্দে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের বাসস্থানে স্বাস্থ্য ও শান্তি আনার জন্য। এর বংশবিস্তারের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি জানা মানে হচ্ছে-নিজেই নিজের পরিবেশকে গড়ে তোলা।
আগামী দশকে পরিবেশবান্ধব বাসস্থান তৈরিতে এই গাছ থাকবে কেন্দ্রস্থলে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।