বইয়ের অভ্যাস মানেই যুক্তিবাদী মন, ন্যায়বান সমাজ

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বই পড়া এখন আর নিছক অবসরের বিনোদন নয়—এটি এক ধরনের সামাজিক শুদ্ধি অভিযান। ব্যক্তি মানস গঠনে, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে এবং সমাজকে সচেতন, সহানুভূতিশীল ও সংবেদনশীল করে তোলার এক নিরব অথচ দৃঢ় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে পাঠাভ্যাস।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণা এবং মনোবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, নিয়মিত বই পড়া মানুষের মস্তিষ্কের যুক্তি ও অনুভূতির ক্ষেত্রগুলোকে উদ্দীপিত করে। বিশেষত prefrontal cortex, insula, এবং temporal lobe অঞ্চলে সক্রিয়তা বাড়ায়, যা সহানুভূতি, নৈতিকতা ও সমাজবোধ তৈরিতে ভূমিকা রাখে। ফিকশন বা উপন্যাস পড়ার মাধ্যমে অন্য মানুষের অভিজ্ঞতার সঙ্গে একাত্ম হওয়ার প্রবণতা বাড়ে, যা "theory of mind" নামক মানসিক দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক।
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে বাস্তব পরিবর্তন লক্ষণীয়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এখন বই পড়ার নতুন ঢেউ বইছে—বিশেষ করে সমাজ-রাজনীতি, পরিবেশ, মানবাধিকার ও ইতিহাসভিত্তিক বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। অনেকেই নিজেদের চিন্তাধারা ও জীবনবোধে এই বইগুলোর প্রভাব অনুভব করছেন।
রাজধানীর বেশ কিছু স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রামীণ এলাকায় কাজ করা এনজিও এখন বই পড়াকে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যকর মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বই পড়া কার্যক্রম, পাঠচক্র, 'বই পড়া উৎসব' ও পাঠ প্রতিক্রিয়া সভা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাজ নিয়ে ভাবার প্রবণতা বাড়াচ্ছে।
একটি নজরকাড়া তথ্য হল—সম্প্রতি দেশের ১২টি জেলায় ৩০টি গ্রামের মধ্যে পরিচালিত একটি বেসরকারি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা প্রতি মাসে অন্তত ২টি বই পড়েন, তারা সমাজের বিভিন্ন সমস্যার (যেমন: বাল্যবিবাহ, মাদক, পরিবেশদূষণ, নারীর প্রতি সহিংসতা) বিষয়ে বেশি সচেতন এবং প্রতিবাদমুখর।
বই পড়া কীভাবে সচেতনতা গড়ে তোলে?
☞যুক্তিবোধের বিকাশ: বইয়ের বিশ্লেষণী ভাষা পাঠককে তথ্য যাচাই করতে শেখায়।
☞ বহুমাত্রিক চিন্তা: বিভিন্ন মতামত ও ইতিহাস জানার ফলে বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হয়।
☞ সহানুভূতির বৃদ্ধি: সাহিত্যে চরিত্রের অনুভব পাঠকের মধ্যেও মানবিক বোধ তৈরি করে।
☞ সংস্কৃতি ও ইতিহাসের জানাশোনা: সমাজের শেকড় সম্পর্কে গভীর জ্ঞান সমাজকে সচেতন করে।
বই পড়ার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির কিছু বাস্তব দিক:
⇨ অনলাইন ক্যাম্পেইনে বই পড়ার উপর ভিত্তি করে সামাজিক বার্তা ছড়ানো হচ্ছে।
⇨ পাবলিক লাইব্রেরি বা ক্যাফে-লাইব্রেরি সংস্কৃতিতে তরুণেরা সমাজ ও বই নিয়ে আলোচনা করছে।
⇨ সামাজিক উদ্যোগ যেমন "পাঠচক্র" বা "একুশে পাঠ প্রকল্প" স্থানীয়ভাবে পাঠাভ্যাসকে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
⇨ মানবিক সমাজ গঠনের জন্য তথ্য প্রযুক্তির পাশাপাশি বই পড়ার মতো ধীর, মননশীল অভ্যাসকে আবারও গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে সচেতন মহল।
বই শুধুমাত্র অতীত জানার মাধ্যম নয়—এটি ভবিষ্যৎ সমাজের কাঠামো কেমন হবে, তা নির্ধারণের এক মৌলিক ভিত্তি।পাঠাগারের নিরবতা, বইয়ের গন্ধ আর পৃষ্ঠার শব্দ এখন এক সামাজিক সঙ্কেত—যেখানে প্রতিটি পৃষ্ঠা মানুষকে করে তোলে আরও মানবিক, আরও চিন্তাশীল, আরও যুক্তিবান। একজন সচেতন পাঠকই পারে একটি সমাজকে অজ্ঞতা ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে একটি প্রগতিশীল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে।