কুরবানির মাংস ঠিকমতো সংরক্ষণ না করলে ঘটতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি

কুরবানির মাংস ঠিকমতো সংরক্ষণ না করলে ঘটতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ঈদুল আজহা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যেখানে কুরবানির পর পরিবার-প্রতিবেশীর মধ্যে তাজা মাংস ভাগাভাগি হয়। কিন্তু এই মাংস যদি যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করা হয়, তাহলে তা হতে পারে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। কারণ তাজা কাঁচা মাংস অতি দ্রুত ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায়।

ব্যাকটেরিয়া কেন এবং কীভাবে জন্মায়?

মানুষের ব্যবহারের উপযোগী মাংসে (বিশেষ করে গরু, খাসি, উট ইত্যাদি) জবাইয়ের পর Salmonella spp., Escherichia coli (E. coli), Listeria monocytogenes, এবং Clostridium perfringens জাতীয় ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবিস্তার করে।

এই জীবাণুগুলো মাংসে প্রাকৃতিকভাবেই থাকতে পারে অথবা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিবেশের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।

সংক্রমণের মাত্রা নির্ভর করে:

১। পরিবেশের তাপমাত্রা

২। সংস্পর্শে থাকা যন্ত্রপাতি ও হাতের পরিচ্ছন্নতা

৩। সংরক্ষণের সময় ও পদ্ধতি

WHO এবং FAO-এর যৌথ খাদ্য নিরাপত্তা গাইডলাইন অনুযায়ী, ৫°C–৬০°C এর মধ্যবর্তী তাপমাত্রা "ডেঞ্জার জোন", যেখানে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবিস্তার করে। একে বলা হয় temperature abuse।
 

৬ ঘণ্টার মধ্যে রেফ্রিজারেশনের গুরুত্ব

IEDCR (Institute of Epidemiology, Disease Control and Research)-এর সংক্রমণ বিষয়ক তথ্য অনুযায়ী, জবাইয়ের পর মাংস যদি ৬ ঘণ্টার মধ্যে রেফ্রিজারেটরে না রাখা হয়, তবে ব্যাকটেরিয়াল লোড হাজার গুণ বেড়ে যেতে পারে, যা পরে ফুড পয়জনিং বা অন্যান্য অন্ত্রজনিত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
 

কারণ:

⇨ মাংসের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে ঘরের তাপমাত্রায় এসে দাঁড়ায় (৩০°C+)

⇨ ঘাম ও রক্ত থেকে আর্দ্র পরিবেশে প্রোটিন ও অ্যামাইনো অ্যাসিডে সমৃদ্ধ কোষ ব্যাকটেরিয়ার জন্য আদর্শ

⇨ ঘরে থাকা মাছি, ধুলাবালি ও হাতের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়
 

কীভাবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করবেন?

প্রাথমিক ধাপ (প্রথম ৬ ঘণ্টা):

⇨ পরিষ্কার পাত্রে মাংস ছায়াযুক্ত, হাওয়া চলাচলযুক্ত স্থানে রাখতে হবে যাতে ঘাম জমে না। 

⇨ আলাদা করতে হবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো। 
 

রেফ্রিজারেশনের সময়:

⇨ ফ্রিজে রাখার আগে মাংসকে ছোট ছোট ভাগে কেটে জিপার বা ফুড-গ্রেড এয়ারটাইট ব্যাগে ঢোকান। 

⇨ফ্রিজের তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে হবে ≤ ৪°C

দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের জন্য ডিপ ফ্রিজে (-১৮°C বা কম) রাখা উচিত
 

ডিফ্রস্টিং নিয়ম:

⇨ ফ্রিজ থেকে বের করে কখনোই রুম টেম্পারেচারে গলাবেন না। 

⇨ বরং পানিতে ভাসিয়ে বা মাইক্রোওয়েভের ডিফ্রস্ট মোড ব্যবহার করুন।
 

ঘরোয়া সচেতনতা জরুরি:

১। মাংস প্রসেসিংয়ের সময় হাতে দস্তানা পরুন

২। কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখুন

৩। ফ্রিজ পরিষ্কার ও তাপমাত্রা ঠিক আছে কি না তা চেক করুন

৪। রান্নার আগে ভালোভাবে গরম করে ৭৫°C পর্যন্ত তাপমাত্রায় রান্না করুন

 

ঈদের মাংস ভাগের আনন্দ যেন অসচেতনতার কারণে বেদনায় রূপ না নেয়। মাংস সংরক্ষণের বিষয়টি কেবল স্বাচ্ছন্দ্যের নয়, এটি সরাসরি আপনার পরিবার ও সমাজের স্বাস্থ্যঝুঁকির সাথে জড়িত। তাই প্রতিটি ঘরেই প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণ জ্ঞান ও বাস্তব প্রয়োগ।


সম্পর্কিত নিউজ