চলাচলের অযোগ্য কাওলার প্রধান সড়ক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর জীবন প্রায় থেমে গেছে

চলাচলের অযোগ্য কাওলার প্রধান সড়ক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর জীবন প্রায় থেমে গেছে
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

রাজধানীর কাওলা এলাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং জনবহুল সড়ক, কাওলা বাজার থেকে আশিয়ান সিটি ও নর্দান ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত অংশ, বর্তমানে কার্যত একটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের ৫ মে থেকে এই রাস্তায় খনন ও ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরুর পর থেকেই পুরো পথটি সম্পূর্ণরূপে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। খোঁড়াখুঁড়ির পর গভীর খাদ, খোলা নর্দমা ও নির্মাণ সামগ্রীর অযত্নপূর্ণ অবস্থানের ফলে যেকোনো মুহূর্তে ঘটছে দুর্ঘটনা, এবং প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের চলতে হচ্ছে।

তবে সমস্যাটি শুধু সাম্প্রতিক নয়। স্থানীয়রা জানান, গত তিন বছর ধরে এই সড়কের অবস্থা ক্রমাগত অবনতি হয়েছে। পাকা রাস্তা ধসে পড়ে গিয়ে খানা-খন্দে পরিণত হয়েছে বহু জায়গা। দীর্ঘ সময় ধরে কোনো কার্যকর সংস্কার বা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ এই রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন নর্দান ইউনিভার্সিটির প্রায় বারো হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কাওলা, আশিয়ান ও বৈশাখী এলাকার হাজারো বাসিন্দা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষা শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। খোলা খাঁদের সঙ্গে জলাবদ্ধতার মিলনে পুরো এলাকা কাদার সাগরে পরিণত হয়। এই জলাবদ্ধতা শুধু পথচারীদের চলাচল ব্যাহত করছে না, বরং সৃষ্টি করছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। জমে থাকা পানিতে মশার বিস্তার ঘটছে, ফলে ডেঙ্গু ও অন্যান্য রোগের আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। পথচলা তো দুরের কথা, রিকশা, মোটরসাইকেল এমনকি অ্যাম্বুলেন্সেরও চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

রাস্তাটি বর্তমানে এতটাই খারাপ অবস্থায় রয়েছে যে, প্রতিদিন কোনো না কোনো দুর্ঘটনার খবর মিলছে। অসতর্ক হয়ে খাদে পড়ে যাওয়া, পানি বা কাদায় পা পিছলে আহত হওয়া — এসব এখন এলাকাবাসীর জন্য নিত্যদিনের ঘটনা। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে, এই দীর্ঘমেয়াদী অব্যবস্থাপনার কারণে শিশুরা, বৃদ্ধরা এবং শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (DNCC) এ নিয়ে এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কয়েক মাস ধরে খোঁড়া অবস্থায় পড়ে থাকা রাস্তাটি যেন সরকারি অবহেলার প্রতিচ্ছবি। স্থানীয়ভাবে বহুবার অভিযোগ জানানো হলেও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ফলে কাওলার এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখন পরিণত হয়েছে অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার প্রতীক হিসেবে।

তবে এলাকাবাসী এখন আশাবাদী হয়ে উঠেছেন “সবার ঢাকা” নামক অ্যাপটির মাধ্যমে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক চালু করা এই অ্যাপের মাধ্যমে যে কেউ সমস্যার ছবি তুলে সরাসরি অভিযোগ করতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সংগঠিতভাবে অনেক মানুষ একসঙ্গে এই অ্যাপ ব্যবহার করে রিপোর্ট করে, তাহলে প্রশাসনের নজর পড়বে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। তাই এলাকাবাসী ও নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, যেন তারা সক্রিয়ভাবে এই সমস্যা তুলে ধরেন।

একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাজারো নাগরিকের জীবন ও যোগাযোগের পথ যদি বছরের পর বছর ধরে এমন চরম অব্যবস্থাপনায় ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে প্রশ্ন ওঠে – নাগরিক সেবা কোথায়? পরিকল্পিত উন্নয়ন আদৌ কি হচ্ছে? কাওলার বাসিন্দারা এখন চায়, আর নয় অবহেলা। তারা এখন চায়, একটি নিরাপদ, চলাচলের উপযোগী সড়ক, যেখানে হাঁটা যাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো যাবে, প্রয়োজন হলে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে সময়মতো।

এই সড়কের উন্নয়ন শুধু কাওলার বিষয় নয়, এটি গোটা ঢাকার উন্নয়ন ধারণার একটি পরীক্ষা। কর্তৃপক্ষ এখন কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই ব্যর্থতা শুধুমাত্র একটি এলাকার ভোগান্তি নয়, বরং একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতার স্থায়ী দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।


সম্পর্কিত নিউজ