লিবিডো হারানোর কারণ ও পথ: জানুন, বুঝুন, রুখে দিন

লিবিডো হারানোর কারণ ও পথ: জানুন, বুঝুন, রুখে দিন
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

যৌন আকাঙ্ক্ষা বা লিবিডো মানুষের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার অন্যতম প্রধান সূচক। কিন্তু আজকের আধুনিক জীবনে এই কামনা হ্রাস পাচ্ছে অনেকের। শুধু বয়স নয়, একাধিক কারণ জড়িত এই জটিল সমস্যায়, যা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে।

লিবিডো হ্রাসের কারণ - 

লিবিডো হ্রাস বলতে যৌন আকাঙ্ক্ষার মাত্রার স্বাভাবিক কমে যাওয়াকে বোঝায়। টেস্টোস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের মতো হরমোনের মাত্রা কমে গেলে লিবিডো হ্রাস পায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই হরমোনের উৎপাদন স্বাভাবিকভাবেই কমে, কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে, অন্য অনেক জটিল কারণও রয়েছে।

স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি শরীরে করটিসল হরমোন বাড়িয়ে তোলে, যা যৌন হরমোনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন, ঘুমের অভাব, এবং ফিজিক্যাল একটিভিটির অভাব শরীরের সার্বিক ক্ষমতা কমিয়ে যৌন ইচ্ছাকে অবনতিতে নিয়ে আসে।
 

মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব -

ডিপ্রেশন বা হতাশার মতো মানসিক রোগ লিবিডো কমার একটি বড় কারণ। মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের ভারসাম্যহীনতা যৌন আগ্রহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অধিকাংশ সময়, লিবিডোর হ্রাস মানসিক অবসাদ ও চাপের ফলস্বরূপ উদ্ভূত হয়, যা প্রায়ই অবহেলিত থেকে যায়।
 

ডায়াবেটিস ও হার্ট ডিজিজের প্রভাব -

মধ্যবয়সী বা বয়স্ক মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ লিবিডো হ্রাসের জন্য অন্যতম কারণ। এই রোগগুলো রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়, যা যৌন অঙ্গের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে পুরুষদের ইরেকটাইল ডিসফাংশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
 

ওষুধ এবং চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ডিপ্রেশনের ওষুধ, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ, এবং হরমোন থেরাপির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লিবিডো হ্রাস করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বদলানো বা বন্ধ করার চেষ্টা কখনো করা উচিত নয়।
 

আধুনিক জীবনধারা ও প্রযুক্তির প্রভাব

স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অতিরিক্ত সময় কাটানো মানসিক দূরত্ব তৈরি করে সম্পর্কের মধ্যে, যা যৌন আগ্রহ কমায়। রাতারাতি ঘুম কমে যাওয়া, যন্ত্রণাদায়ক শারীরিক অবস্থান, এবং পরিশ্রমের অভাব—এসব মিলিত হয়ে যৌন ইচ্ছাকে বাধাগ্রস্ত করে।
 

সম্পর্কের মানসিক ও সামাজিক দিক

যৌন আকাঙ্ক্ষা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও আবেগগত সংযোগেরও ফলাফল। পাত্র-পাত্রীর মধ্যে ভালোলাগা, বিশ্বাস, এবং মুক্ত আলোচনা লিবিডো বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদী মনোমালিন্য, অবজ্ঞা, অথবা যৌনতার প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি যৌন আগ্রহ কমিয়ে দেয়।
 

কী করা যেতে পারে?

⇨ খোলাখুলিভাবে আলোচনা: স্বামী-স্ত্রী বা অংশীদারদের মধ্যে যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়ায় এবং যৌন ইচ্ছা ফেরাতে সাহায্য করে।

⇨ শারীরিক ব্যায়াম: নিয়মিত হাঁটা, যোগা, বা কার্ডিও ব্যায়াম শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে এবং হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে।

⇨ মানসিক স্বাস্থ্য চর্চা: মেডিটেশন, থেরাপি, এবং মানসিক চাপ কমানোর অনুশীলন লিবিডো উন্নত করে।

⇨ পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ও গুণগতমান সম্পন্ন ঘুম শরীরের পুনরুজ্জীবনে সহায়ক।

⇨ পুষ্টিকর খাদ্য: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ডি, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাদ্য যৌন স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

⇨  চিকিৎসা পরামর্শ: যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যৌন স্বাস্থ্যকে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সঙ্গে সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। লিবিডো হ্রাস হলে সেটিকে অবহেলা না করে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নেওয়া দরকার।
 

যৌন আকাঙ্ক্ষা মানুষের জীবনের একটি স্বাভাবিক, প্রাণবন্ত এবং স্বাস্থ্যকর অংশ। শরীর ও মনের সুস্থতা বজায় রেখে সচেতন জীবনযাপন করলে এই আকাঙ্ক্ষা ফিরে আসা সহজ। বিজ্ঞানসম্মত মনোভাব, সঠিক তথ্য এবং পরামর্শের মাধ্যমে লিবিডো হ্রাস মোকাবিলা করা সম্ভব এবং এটি আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুখের জন্য অপরিহার্য।


সম্পর্কিত নিউজ