সাইবার জগতে নিরাপত্তার অদৃশ্য ঢাল,ডিজিটাল বর্ম ফায়ারওয়াল

সাইবার জগতে নিরাপত্তার অদৃশ্য ঢাল,ডিজিটাল বর্ম ফায়ারওয়াল
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিজ্ঞানের ছায়ায় গড়ে উঠেছে এমন এক প্রযুক্তি, যা একাই প্রতিদিন প্রতিহত করে কোটি কোটি সাইবার হুমকি। ইন্টারনেট এখন আমাদের জীবনের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে, মোবাইল অন করতে না করতেই শুরু হয় ডেটা ট্রান্সফার, লগইন, ক্লাউড অ্যাক্সেস, ভিডিও কল কিংবা ব্যাংকিং। এসবের পেছনে ছায়ার মতো কাজ করে যায় একটি নিরব প্রযুক্তি—ফায়ারওয়াল। কিন্তু এটি কী? কীভাবে কাজ করে? আর কেনই বা এটা এখন প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য?

ফায়ারওয়াল কী, এবং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

ফায়ারওয়াল (Firewall) হলো এক ধরনের নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি সিস্টেম, যা কোনো কম্পিউটার বা নেটওয়ার্কে আসা-যাওয়া করা ডেটা প্যাকেটগুলো যাচাই করে। কোন তথ্য প্রবেশ পাবে আর কোনটি পাবে না, সেটা সিদ্ধান্ত দেয় এই প্রযুক্তিই। একে বলা হয় "policy-based traffic controller"।

স্ট্যাটিসটিকস বলছে, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে প্রতি মিনিটে গড়ে ৯৪৬টি সাইবার আক্রমণের চেষ্টা হয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই প্রতিহত করেছে শক্তিশালী ফায়ারওয়াল ব্যবস্থাপনা।

 

কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি?

ফায়ারওয়াল কাজ করে নীতিমালাভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে। নিচে এর কার্যপ্রণালির সারসংক্ষেপ:

⇨ Packet Filtering: প্রতিটি ডেটা প্যাকেট পরীক্ষা করে, নির্ধারিত মানদণ্ডে মিল না থাকলে সেটি আটকে দেয়।

⇨ Stateful Inspection: এটি শুধু প্যাকেট দেখেই নয়, তাদের পূর্বের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেও সিদ্ধান্ত নেয় (যেমন: আগেও এই সার্ভারের সাথে নিরাপদ যোগাযোগ হয়েছিল কিনা)।

⇨ Proxy Service: এটি একটি 'মধ্যবর্তী' নোড হিসাবে কাজ করে—আপনি ও ইন্টারনেটের মাঝে থেকে সব তথ্য যাচাই করে পাঠায়।

⇨ Deep Packet Inspection (DPI): উন্নত ফায়ারওয়াল এখন শুধু হেডার নয়, ডেটার ভেতরের কনটেন্টও স্ক্যান করে সাইবার হুমকি শনাক্ত করতে পারে।

 

কোন কোন ধরনের ফায়ারওয়াল রয়েছে?? 

নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত ফায়ারওয়ালের প্রধান ধরনগুলো হলো:

⇨ নেটওয়ার্ক-বেসড ফায়ারওয়াল (Network-based Firewall): সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে, বড় সার্ভার বা কর্পোরেট নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত।

⇨ হোস্ট-বেসড ফায়ারওয়াল (Host-based Firewall): একটি নির্দিষ্ট কম্পিউটার বা ডিভাইসে ইনস্টল হয়ে সেই ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

⇨ সফটওয়্যার ফায়ারওয়াল (Software Firewall): অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে, ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।

⇨ হার্ডওয়্যার ফায়ারওয়াল (Hardware Firewall): আলাদা ডিভাইস হিসেবে কাজ করে, যেমন রাউটার বা গেটওয়ে, যা নেটওয়ার্কের প্রবেশপথে বসানো হয়।

⇨ ক্লাউড ফায়ারওয়াল (Cloud Firewall): ভার্চুয়াল পরিবেশ ও ক্লাউড সার্ভিসে ব্যবহৃত, যেখানে অনলাইন সিকিউরিটি প্রদান করে।
 

আধুনিক ব্যবহারে ফায়ারওয়াল

বর্তমানে শুধুমাত্র ল্যাপটপ বা অফিস সার্ভার নয়, স্মার্টফোন, স্মার্ট টিভি, গেম কনসোল এমনকি স্মার্ট ফ্রিজেও নিরাপত্তা দিতে ফায়ারওয়াল ব্যবহৃত হচ্ছে। একে বলা হয় "IoT Firewall Adaptation"।

✔ ক্লাউড-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যেমন গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট তাদের সার্ভারে মিলিয়ন ডলারের ফায়ারওয়াল ইকোসিস্টেম ব্যবহার করে প্রতিদিন লক্ষাধিক আক্রমণ প্রতিহত করছে।
 

ফায়ারওয়াল না থাকলে কী ঝুঁকি?

⇨ ডেটা চুরি ও ব্ল্যাকমেইল

⇨ র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণ

⇨ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাক

⇨  অফিস বা সরকারি নেটওয়ার্কে হানা

⇨ ইমেল ফিশিং, স্পাইওয়্যার সংক্রমণ
 

ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীর করণীয়

১. ডিভাইসের ডিফল্ট ফায়ারওয়াল সক্রিয় আছে কিনা দেখে নিন। 

২. অপরিচিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ বন্ধে "outbound rule" ব্যবহার করুন।

৩. অ্যাপ্লিকেশন-বাই-অ্যাপ্লিকেশন ফিল্টার সেট করুন। ৪. Public Wi-Fi ব্যবহারে সতর্ক থাকুন, সেখানে ফায়ারওয়াল প্রায় থাকেই না।
 

ফায়ারওয়াল মানেই 'প্রথম সুরক্ষা' - যখন আপনি ভাবছেন, "আমার ডেটা কে দেখছে না তো?", তখনই কোথাও আপনার ডিভাইসে ফায়ারওয়াল কাজ করে যাচ্ছে আপনাকে আড়ালে থেকে রক্ষা করতে। এটি হ্যাকিং ঠেকানোর চেয়ে অনেক বেশি—এটি হলো ডিজিটাল সুরক্ষার প্রথম স্তম্ভ।

তাই ভবিষ্যতের প্রযুক্তি-নির্ভর জীবনে, ফায়ারওয়াল নিয়ে সচেতনতা শুধু আইটি পেশাজীবীদের জন্য নয়—সবার জন্য অপরিহার্য।


সম্পর্কিত নিউজ