XBB সাবভ্যারিয়েন্টে করোনার নিঃশব্দ নতুন আগ্রাসন, উপসর্গ নেই বলেই সর্বনাশ আরও নীরব!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
করোনা যেন এখন ছদ্মবেশী এক ঘাতক। পুরনো সেই উচ্চ তাপমাত্রা, কাশির ধোঁয়া, স্বাদ-ঘ্রাণ হারানোর মতো উপসর্গ ভুলে যান। এবার COVID-19 তার রূপ পাল্টে এসেছে-আর এই নতুন চেহারায়, নাম XBB সাবভ্যারিয়েন্ট, ভয় অনেকটাই ভিন্ন। জ্বর নেই, কাশি নেই-তবু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নিউমোনিয়া নিয়ে। বিশ্বব্যাপী ভাইরোলজিস্টরা এখন এই নতুন সাবভ্যারিয়েন্টের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখছেন।
আর যে ছবি উঠে আসছে, তা উদ্বেগজনক: এটি আগের তুলনায় বেশি সংক্রামক, দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ঘটায়, আর আক্রমণ করে সরাসরি ফুসফুসের গভীরে। আর এই কারণে রোগ শনাক্তের আগেই শরীরে ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে।
করোনা ভাইরাসের নতুন ছলনাময় রূপ-
XBB সাবভ্যারিয়েন্ট হল দুটি ভিন্ন ওমিক্রন সাবলাইনের জেনেটিক রিকম্বিন্যান্ট। এর জটিল মিউটেশন স্পাইক প্রোটিনে এমন পরিবর্তন এনেছে, যা শরীরের প্রাথমিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। এটি মূলত শ্বাসতন্ত্রের নিচের অংশে আঘাত হানে, যার ফলে উপরের শ্বাসতন্ত্রের (নাক, গলা) উপসর্গ থাকছে না, কিন্তু ভিতরে ধীরে ধীরে জন্ম নিচ্ছে নিউমোনিয়া।
লক্ষণগুলো কীভাবে ভিন্ন?
XBB আক্রান্তদের বড় চ্যালেঞ্জ হল এর "অপ্রচলিত উপসর্গ"। রোগীরা সাধারণত আসেন এই উপসর্গ নিয়ে:
- মাথা ব্যথা (চাপের মতো অনুভব)
-গলা ও জয়েন্টে ব্যথা
-পিঠে অস্বস্তি বা ব্যথা
-ক্ষুধা হ্রাস ও দুর্বলতা
-স্থায়ী ক্লান্তি
-শ্বাস নিতে কষ্ট, কিন্তু প্রথমে বোঝা যায় না
-RT-PCR নেগেটিভ হলেও এক্স-রেতে ফুসফুসে ছোপ দেখা যায়—নিউমোনিয়ার লক্ষণ
কেন এতটা ছলনাময় এই সাবভ্যারিয়েন্ট?
XBB-এর বিশেষত্ব হল এর ইমিউন ইভেশন ক্যাপাবিলিটি, অর্থাৎ এটি শরীরের পূর্ববর্তী করোনা-সংক্রান্ত অ্যান্টিবডি চিনে ফেলতে পারে এবং তার প্রতিরোধ এড়িয়ে চলে। ফলে এমনকি পুরনো ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও সংক্রমিত হচ্ছেন, যদিও গুরুতর রোগের হার কিছুটা কম।
বিজ্ঞান বলছে, XBB ভ্যারিয়েন্ট পূর্বের তুলনায় প্রায় ৫-৭ গুণ বেশি সংক্রামক, যা মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা রাখে। ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর প্রথম দিকে তেমন উপসর্গ না থাকলেও, একবার ফুসফুসে বসতি গড়লে তা মারাত্মক হতে পারে।
✪ ঝুঁকিতে কারা বেশি?
- ৫০+ বয়সী মানুষ
- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি
- যারা দীর্ঘস্থায়ী ওষুধ সেবন করছেন
- শিশু ও গর্ভবতী নারীরা
- যাদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল
✔✔ করণীয় -
১. উপসর্গ হালকা হলেও গুরুত্ব দিন: মাথা ব্যথা বা দুর্বলতাকে অবহেলা করবেন না-বিশেষত যদি তা কয়েকদিন স্থায়ী হয়।
২. RT-PCR নেগেটিভ হলেও লক্ষণ থাকলে HRCT বা বুকের এক্স-রে করুন।
৩. মাস্ক পরিধান করুন, বিশেষত জনসমাগমে, মার্কেটে বা গণপরিবহনে।
৪. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন-কমপক্ষে ১.৫ মিটার।
৫. নিয়মিত সাবান-পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৬. বাসায় বয়স্ক ও অসুস্থ সদস্য থাকলে তাদের আলাদা করে যত্ন নিন।
ব্যক্তিগত উদাহরণ নয়, সমষ্টিগত দায়িত্ব
এই রিপোর্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রচার নয়। বরং, এটি একটি তথ্যভিত্তিক, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ—যার লক্ষ্য, সমাজকে সাবধান করা এবং আগেভাগে ঝুঁকি রোধে সচেতনতা তৈরি করা।
আমরা যত বেশি জানব, তত বেশি রক্ষা পাব। পরিবার, সহকর্মী, বন্ধু—সবাইকে জানানো জরুরি। করোনা এবার আর শব্দ করে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে না, সে নিঃশব্দে ফুসফুসে ঢুকছে।
সতর্ক থাকুন-নিশ্চিন্ত থাকুন।