গর্ভকালীন যত্নে সচেতনতা মানেই সুস্থ ভবিষ্যৎ

গর্ভকালীন যত্নে সচেতনতা মানেই সুস্থ ভবিষ্যৎ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গর্ভাবস্থাকে ঘিরে নারীর জীবনে শুরু হয় এক অনন্য জার্নি। এই সময় শুধু একজন নারীর দেহগত পরিবর্তনই নয়, মনস্তাত্ত্বিক ও হরমোনজনিত এক জটিল অথচ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া চলতে থাকে। অথচ আমাদের সমাজে এখনও গর্ভকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও সচেতনতার অভাব রয়েছে। যার পরিণতিতে দেখা দেয় নানা জটিলতা-প্রসূতি ও নবজাতক উভয়ের ক্ষেত্রেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভধারণের শুরু থেকে অন্তত ৩৮–৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি ধাপে মায়ের শরীরে ঘটে যায় বড় ধরনের পরিবর্তন।

◑ প্রথম তিন মাসে (প্রথম ট্রাইমেস্টার) গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়ার পরপরই মা ও ভ্রূণের স্বাস্থ্যের ভিত্তিপ্রস্তর গড়ে ওঠে। এই সময়েই বেশি দেখা দেয় morning sickness, হরমোনের উঠানামা, এবং ক্লান্তি। একে অবহেলা করলে ভবিষ্যতের জটিলতা অনিবার্য হয়ে ওঠে।

◑ দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার (১৩–২৭ সপ্তাহ) তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক হলেও এখানেও জরুরি পর্যবেক্ষণ-রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ এবং ওজন বাড়ার হার ঠিক আছে কি না তা খেয়াল রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে এই সময়ে গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন সম্পন্ন হয়। বিজ্ঞান বলছে, এই সময়ে ভ্রূণের শ্রবণশক্তি কাজ করতে শুরু করে, এমনকি সে মায়ের কণ্ঠস্বরও চিনে নিতে পারে।

◑ তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে (২৮–৪০ সপ্তাহ) গর্ভধারিণীর জন্য শুরু হয় শারীরিক ভার বহনের সর্বোচ্চ চ্যালেঞ্জ। ঘুমে ব্যাঘাত, হজমে সমস্যা, শ্বাসকষ্ট-সব মিলিয়ে এটি সবচেয়ে সংবেদনশীল সময়। তবে সচেতনতা ও বৈজ্ঞানিক তথ্যভিত্তিক যত্ন থাকলে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকতে পারেন।
 

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হালকা হাঁটা, পর্যাপ্ত পানি পান, আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ, এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা হলে জটিলতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। পাশাপাশি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বা প্রি-এক্ল্যামসিয়ার ক্ষেত্রে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সুপারিশ করে, গর্ভাবস্থায় অন্তত ৮ বার ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। তবে দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশে এখনও অনেক অঞ্চলে এই সেবা পর্যাপ্ত নয় বা সচেতনতা সীমিত। ফলে অনেক নারীকেই অপ্রস্তুত অবস্থায় জটিল প্রসবের মুখোমুখি হতে হয়।

গর্ভাবস্থা মানে কেবল একটি শিশুর জন্ম নয়-এটি একটি নতুন জীবনের সূচনা, যেখানে একটি নারীর সুস্থতা মানেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যনির্ভর ভিত্তি। তাই শুধু মায়েরা নয়, পরিবার ও সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে, তথ্যভিত্তিক যত্ন ও সহানুভূতির সঙ্গে গর্ভকালীন স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে।

গর্ভাবস্থায় সুস্থতার চাবিকাঠি হলো জ্ঞান, যত্ন ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি। আর এই তিনের সমন্বয় ঘটলে, মাতৃত্ব হবে শান্তিময় ও নিরাপদ—মায়ের জন্য, শিশুর জন্য এবং ভবিষ্যতের জন্যও।


সম্পর্কিত নিউজ