লেজারের আলোর সাহায্যে মহাকাশের দূরত্বের গোপন রহস্য উন্মোচন!

লেজারের আলোর সাহায্যে মহাকাশের দূরত্বের গোপন রহস্য উন্মোচন!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মহাকাশের বিশাল গহ্বর থেকে শুরু করে নিকটতম গ্রহ পর্যন্ত দূরত্ব মাপার পদ্ধতিতে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে লেজার ইন্টারফেরোমেট্রি প্রযুক্তি। যেখানে আগে দূরত্ব নির্ধারণে সীমিত সময় ও কম সূক্ষ্মতা ছিল, সেখানে আজ এই পদ্ধতি দিয়ে এক একরাশ কিলোমিটার দূরত্ব মিলিমিটার স্তরে নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে।

লেজার ইন্টারফেরোমেট্রি হচ্ছে এক বিশেষ বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তি, যেখানে অত্যন্ত সূক্ষ্ম লেজার বিম দুটি বা ততোধিক সংখ্যক উৎস থেকে নির্গত হয়ে পারস্পরিক হস্তক্ষেপ সৃষ্টি করে। এই ইন্টারফেরেন্স প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করেই বিজ্ঞানীরা নির্ধারণ করেন দূরত্বের একেবারে ক্ষুদ্রতম পরিবর্তন। এর মাধ্যমে মহাকাশে অবস্থিত বস্তুগুলোর অবস্থান ও গতিবিধি মাপা যায় এমন সূক্ষ্মতায়, যা আগে কখনো সম্ভব হয়নি।

বিশ্বের শীর্ষ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা যেমন নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) তাদের প্রধান মহাকাশ মিশনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে, LISA (Laser Interferometer Space Antenna) মিশনটির মাধ্যমে গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ শনাক্তকরণসহ মহাবিশ্বের গোপন শক্তির সন্ধান চলছে, যেখানে লেজার ইন্টারফেরোমেট্রি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এছাড়াও, লেজার ইন্টারফেরোমেট্রি প্রযুক্তির সাহায্যে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব এমন নিখুঁতভাবে মাপা হয় যে তার ভুলত্রুটি মিলিমিটারের কম। এমনকি বৃহত্তর গ্রহ ও উপগ্রহের কক্ষপথ বিশ্লেষণেও এই প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটিয়েছে। মহাকাশের বস্তুর পরস্পরের দূরত্ব ও গতিবেগ নির্ধারণে এটি অতুলনীয় সুবিধা নিয়ে এসেছে।

এই প্রযুক্তি মূলত "আলোর গতি" এর বৈজ্ঞানিক ধারণাকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে। একটি লেজার বিম মহাকাশে পাঠানো হয়, যা লক্ষ্যবস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। ফিরতি আলোর সময় নিরূপণ করে দুরত্ব নির্ণয় করা হয়। অতিসুক্ষ্ম ইন্টারফেরেন্স বিশ্লেষণের ফলে মহাকাশে বস্তুদের একেবারে ক্ষুদ্র নাড়াচাড়া ও ভ্রমণ গতিও নিরীক্ষণ করা সম্ভব হয়।

ফলশ্রুতিতে, লেজার ইন্টারফেরোমেট্রি কেবল দূরত্ব নির্ণয়েই সীমাবদ্ধ না থেকে মহাবিশ্বের গঠন, গতিবিজ্ঞান ও শক্তির রহস্য উদ্ঘাটনে এক যুগান্তকারী হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, এই প্রযুক্তি আগামী দশকে মহাবিশ্বের একদম নতুন অধ্যায় খুলে দেবে, যেখানে আমরা আরও বেশি গভীরে পৌঁছে মহাজাগতিক ধাঁধাগুলো সমাধান করতে পারব।

আসলে, লেজার ইন্টারফেরোমেট্রি প্রযুক্তি আজকের মহাকাশ বিজ্ঞানের এক আলোবর্ষ দূরবর্তী দিগন্তের চাবিকাঠি — যেটি আলোর গতির মতোই দ্রুতগতিতে আমাদের মহাবিশ্বের সত্যিকারের ছবি ফুটিয়ে তুলছে।


সম্পর্কিত নিউজ