অসম্মানকে স্বস্তি না দিয়ে, নিজের মর্যাদার রক্ষাকবচ হয়ে উঠুন

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রায়ই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, যেখানে নিজের সীমারেখা নির্ধারণ না করলে অপরপক্ষ সেই শূন্যতা পূরণ করে নেয় 'ক্ষমতার অভ্যাসে'। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার যিনি আপনার প্রতি অসম্মান প্রদর্শনে 'স্বস্তি' বোধ করেন, তাকে বারবার সুযোগ দিলে সেই আচরণকে তিনি বৈধতা ভেবে নেবেন। এর ফল হয় দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ক্ষয় ও আত্মবিশ্বাসের অবক্ষয়।
মনোবিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাগুলো বলছে, যেকোনো সম্পর্ক-হোক সেটা পেশাগত, পারিবারিক, বা সামাজিক-তাতে সম্মান বজায় রাখা মানবিক স্বাস্থ্য রক্ষার মৌলিক স্তম্ভ। যিনি ক্রমাগত আপনাকে ছোট করেন, উপেক্ষা করেন বা নিরব ছাঁপে আঘাত করেন, তার প্রতি বারবার নীরব থাকা একপ্রকার আত্মপ্রবঞ্চনা।
বিখ্যাত সমাজবিদ ও মনোচিকিৎসা গবেষকেরা মানবিক মর্যাদাকে রক্ষার কৌশল হিসেবে যেটি বারবার গুরুত্ব দেন তা হলো-'নিজ সীমারেখা পরিষ্কারভাবে স্থাপন করা'। যখন কাউকে বোঝানো হয় যে, একটি নির্দিষ্ট আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়, তখন তা মানসিক সুস্থতার রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়ায়।
মানবিক আচরণের বিজ্ঞান অনুযায়ী, যখন কোনো ব্যক্তি অপরের অনুভূতি বা অবস্থানকে বারবার উপেক্ষা করে, তখন মস্তিষ্কের 'অ্যামিগডালা' অংশে প্রতিক্রিয়াশীল চাপ সঞ্চিত হতে থাকে, যা একসময় মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ বা আত্মসম্মান বোধের সংকটে রূপ নিতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক বিচ্ছিন্নতাও ডেকে আনতে পারে।
সামাজিক মনোবিজ্ঞান গবেষণায় একে বলা হয় 'নরম সহিংসতা', যার সবচেয়ে ভয়ানক দিক হলো-এটি সহজে চেনা যায় না, কিন্তু গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যেসব সমাজে ক্ষমা ও সহনশীলতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেখানে ব্যক্তিগত সীমা রক্ষা করা একপ্রকার লড়াই।
তবে বিজ্ঞান বলছে, আত্মমর্যাদা রক্ষা করা মানেই 'আক্রমণাত্মক হওয়া' নয়; বরং এটা হলো নিজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা। প্রতিবার অসম্মানের বিরুদ্ধে শান্ত ও দৃঢ় অবস্থান নেওয়া আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
সমাজে সংহতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন পারস্পরিক সম্মান। কিন্তু সেটা কখনোই একতরফা হতে পারে না।
আত্মসম্মানকে বলি দিয়ে কোনো সম্পর্কই টেকসই হয় না-এটা এখন বৈজ্ঞানিক ও নৈতিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই স্পষ্ট।
সম্মান পাওয়ার শুরু হয় নিজেকে সম্মান দেওয়ার মাধ্যমেই। আর নিজের প্রতি সেই সম্মান বজায় রাখতে হলে, অসম্মানকে 'অভ্যাস' হতে দেওয়া নয়, বরং তাতে স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া দেখানোই প্রকৃত আত্মরক্ষার পথ।