মিমসের হাসির আড়ালে সাইবার যুগের নতুন স্বাস্থ্যঝুঁকি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
হাসির খোরাক আর কিছুক্ষণের মনোরঞ্জন-এই ধারণাতেই গড়ে উঠেছে ইন্টারনেটের 'মিমস' কালচার। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই চোখে পড়ে হাজারো মিমস, যার অনেকগুলোই চটকদার, অনেক সময় অশ্লীল কিংবা মানসিকভাবে বিভ্রান্তিকর।কিন্তু গবেষণা বলছে, দিনের পর দিন অতিরিক্ত মিমস-ভিত্তিক কনটেন্টে ডুবে থাকার প্রভাব শুধু আবেগে নয়, ক্ষতিকর হতে পারে আমাদের মস্তিষ্কেও।
সাম্প্রতিক মনোবিজ্ঞান ও নিউরোসায়েন্স গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ও অবিরাম মনোযোগ-ভিক্ষাকারী কনটেন্ট—বিশেষ করে দ্রুত পাল্টানো, রসিকতা ও ট্রেন্ডিং ভিত্তিক মিমস -মানুষের কগনিটিভ ফাংশন, তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষমতা এবং বাস্তবমুখী চিন্তার দক্ষতাকে কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে দেখা দিতে পারে decision fatigue, মানসিক অস্থিরতা, এমনকি attentional fragmentation-যা দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
মানুষের ব্রেইন যেভাবে কাজ করে, তাতে প্রতিটি তথ্য বা চিত্রই কিছু না কিছু প্রভাব রাখে। ক্রমাগত অতিরঞ্জিত বা বিভ্রান্তিকর মিমস দেখলে ডোপামিন রিওয়ার্ড সিস্টেম অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে, যার ফলে মস্তিষ্ক ছোট ছোট আনন্দের উৎসে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যে গভীর মনোযোগ বা বিশ্লেষণমূলক চিন্তা দুরূহ হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব তরুণ-তরুণী প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রল করে কাটায়, তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের ব্রেইনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে 'শর্ট টার্ম স্যাটিসফ্যাকশন' এর জন্য, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদে পড়ালেখা, গভীর পাঠ, গবেষণা বা বাস্তব জীবনের জটিলতা বিশ্লেষণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এই প্রভাবকে বিজ্ঞানে বলা হয় "Digital Dementia"-এক ধরনের ডিজিটাল নির্ভরতা-ঘটিত মানসিক অবক্ষয়, যেখানে অতিরিক্ত প্রযুক্তিনির্ভরতা মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস (স্মৃতিশক্তি ও বিশ্লেষণের অংশ) কম সক্রিয় করে তোলে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কি মিমস একেবারে খারাপ?
উত্তর-না। তবে সীমা ছাড়ানো মিমস-আসক্তি, যেটি মানুষকে তথ্যহীন হাসির ফাঁদে ফেলে দেয় ও গভীর মননের বদলে অবচেতন প্রতিক্রিয়ায় অভ্যস্ত করে তোলে, সেটাই বিপজ্জনক।
তাই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করার সময় সচেতন থাকা জরুরি-মিমস দেখা মানেই সব সময় "বোকা" হওয়া নয়, তবে শুধুই মিমসে ডুবে থাকা, নিজের মননের দখল তুলে দেওয়া-সেটা নিঃসন্দেহে মস্তিষ্কের জন্য পচনের পথ প্রশস্ত করে।
আপনি যদি লক্ষ করেন, সহজ কনটেন্ট ছাড়া কিছুতেই মন বসে না, পড়াশোনা বা কাজের সময় ঘন ঘন ফোন দেখতে ইচ্ছে করে-তবে এখনই সময় একটা "ডিজিটাল ডিটক্স" ভাবার। মিমসের হাসি যেন না হয়ে ওঠে মস্তিষ্কের নিঃশব্দ অবনতি!