কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকপাত

কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

"পুরুষগণ নারীদের উপর দায়িত্বশীল, কারণ আল্লাহ একেকজনকে আরেকজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে।" - সূরা আন-নিসা (৪:৩৪)
 

এই আয়াতে 'কওওয়ামুন' শব্দটি ব্যবহার হয়েছে, যার অর্থ "অভিভাবক" বা "তত্ত্বাবধায়ক" - অর্থাৎ স্বামী সংসারের সুশাসনের দায়িত্ব পালন করে।
 

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"আল্লাহ্ ব্যতীত যদি অন্য কাউকে আমি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম।"- [তিরমিযীঃ ১১৫৯] 

এখানে সিজদা উল্লেখের মাধ্যমে স্বামীর অধিকার কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝানো হয়েছে।

"নারী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীলা এবং তাকে সে বিষয়ে জবাবদিহি করা হবে"।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২৯; তিরমিযী, হাদীস নং ১৭০৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৯২৮; আহমদ (২/১২১) ]

স্ত্রীর ওপর স্বামীর আরো একটি হক হচ্ছে, ঘরের কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়া এবং তাকে সেবিকা আনতে বাধ্য না করা, যা তার জন্য কষ্টকর এবং যার ফলে সে নিজে বা তার সন্তান-সন্ততিরা ফেতনার সম্মুখীন হতে হয়।
 

তবে, স্বামীর আদেশ সবসময় শোনা বাধ্যতামূলক নয়

ইসলাম শাসন ও আদেশে আল্লাহর বিধানকে সর্বোচ্চ মানে। কোনো স্বামী যদি স্ত্রীকে ইসলামের বিরুদ্ধে আদেশ দেয়, যেমন হারাম কাজ করতে বলা বা ইবাদত থেকে বিরত রাখা, তখন সেই আদেশ পালন করা জায়েয নয়।

অর্থাৎ, স্বামীর কথা শুনতে হবে কিন্তু সীমার মধ্যে। ইসলামের নীতির পরিপন্থী আদেশ মেনে চলা গুনাহ।
 

ইসলাম নারীর অধিকারকেও গুরুত্ব দেয়

নারীকে ইসলামে মর্যাদা ও অধিকার দেওয়া হয়েছে। স্বামী স্ত্রীর প্রতি দয়াশীল ও সম্মানজনক আচরণ করবে, আর স্ত্রীর দায়িত্ব থাকবে পারিবারিক শান্তি বজায় রাখা। 

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি"।
[ইবন মাযাহ: হাদীস নং ১৯৭৭, তিরমিযী: হাদীস নং ৩৮৯৫ ] 

স্বামীর কথা শোনা ইসলামে নারী দায়িত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু এটি ইসলামিক বিধানের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পারস্পরিক সম্মান, দায়িত্ব পালন এবং আল্লাহর আদেশকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হলে দাম্পত্য জীবন হয়ে ওঠে সুখময় ও স্থিতিশীল।
 

সতর্কতা: কোনো স্বামী বা সমাজ এই বিধানকে নারীর অধিকার হরণ বা নিপীড়নের জন্য ব্যবহার করতে পারে না। ইসলাম ন্যায় ও দয়াময়তায় বিশ্বাস করে।