প্রযুক্তির পাঠশালায় গ্রামের মেয়েরা: পাল্টে যাচ্ছে জীবনের সমীকরণ

প্রযুক্তির পাঠশালায় গ্রামের মেয়েরা: পাল্টে যাচ্ছে জীবনের সমীকরণ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

এক সময় যে গ্রামগুলো ছিল কেবল কৃষিনির্ভর, সেখানেই আজ কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখে কোড লিখছে কিশোরী, ফ্রিল্যান্সিং করছে গৃহবধূ, অনলাইন ব্যবসা চালাচ্ছে কলেজপড়ুয়া তরুণী। প্রযুক্তি শিক্ষায় গ্রামের মেয়েরা এখন আর পিছিয়ে নেই-বরং অনেকক্ষেত্রে শহরের শিক্ষিত নারীদের চেয়েও তারা এগিয়ে।

এই পরিবর্তনটা এসেছে নিঃশব্দে, কিন্তু গভীরভাবে। ২০১৮ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ধাপে ধাপে গ্রামীণ জনপদের নারীরা যখন প্রথম ডিজিটাল প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পা রাখে, তখন হয়তো কেউ ভাবেনি-এই মেয়েরাই একদিন গুগল ডকসে রিপোর্ট বানাবে, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট শিখবে, ওয়েবসাইট ডিজাইন করবে।

প্রযুক্তি শিক্ষায় প্রবেশ, শুধু শিক্ষার বিষয় নয়-এটা ছিল স্বাধীনতার দরজা খোলার মতো।

ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, আইসিটি বিভাগ, বিভিন্ন টেক উদ্যোক্তা উদ্যোগ ও উদ্যোক্তাদের নিজস্ব অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম-সব মিলিয়ে প্রযুক্তি শেখার সুযোগ এখন গ্রামের মেয়েদের হাতের মুঠোয়। অধিকাংশ সেন্টারে বর্তমানে নারী অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশের কাছাকাছি।

তারা শুধু সফট স্কিল বা বেসিক কম্পিউটার ব্যবহারই শিখছে না-বর্তমানে শত শত গ্রামীণ তরুণী ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন, SEO, ডিজিটাল মার্কেটিং এমনকি Python, HTML, CSS, JavaScript-এর মতো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজেও দক্ষ হয়ে উঠছে। কেউ কেউ আবার বিদেশি ক্লায়েন্টদের সাথে রিমোট কাজ করে মাসে হাজার ডলার আয় করছে।

তথ্য বলছে, শুধুমাত্র ডিজিটাল প্রশিক্ষণ নয়-তারা এখন নিজেরাই নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। একজন তরুণী নিজের মোবাইলে ভিডিও এডিটিং করে ইউটিউব চ্যানেল চালাচ্ছে, আবার অন্যজন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য ফেসবুক পেজ চালাতে সহায়তা করছে। অনেকে আবার গ্রামের অন্য মেয়েদের জন্য প্রযুক্তি শেখানোর ছোট কোর্স চালু করেছে।

এই মেয়েরা প্রমাণ করে দিচ্ছে-প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হলে শুধু শহরের পরিবেশ নয়, দরকার মানসিক প্রস্তুতি, আগ্রহ আর শেখার ইচ্ছা। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৪০টি জেলার অন্তত ২,০০০টির বেশি গ্রামে নারীরা প্রযুক্তিকে জীবনের অংশ করে নিচ্ছে, যেটা দেশের ডিজিটাল প্রবৃদ্ধির জন্য এক বড় উদাহরণ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রযুক্তি শিক্ষায় মেয়েদের অগ্রগতি কেবল অর্থনৈতিক মুক্তি নয়, বরং সামাজিক ক্ষমতায়নের দিকেও দারুণ ভূমিকা রাখছে। এই মেয়েরাই আজ পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিচ্ছে, ভাইয়ের স্কুল অ্যাসাইনমেন্টে সাহায্য করছে, অনেকে আবার অনলাইনে কোচিংও চালাচ্ছে।

এখন আর প্রযুক্তি মানেই শুধু শহরের ছেলেদের বিষয় নয়। এখন প্রযুক্তি মানেই গ্রামের মেয়েরাও পারবে, জানবে, বদলে দেবে নিজেকে ও সমাজকে।

এই পরিবর্তনের মধ্যে আছে আত্মবিশ্বাস, উদ্ভাবন আর সম্ভাবনার এক বিস্ময়কর যাত্রা। প্রযুক্তির ক্লাসরুমে গ্রামের মেয়েরা এখন আর শিক্ষার্থী নয়-তারা আজ গাইড, নির্মাতা আর ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ