এক ক্লিকেই তথ্যের সাগরে বিচরণ - ইন্টারনেটের গভীর রহস্য উন্মোচন

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আজকের বিশ্বে ইন্টারনেট ছাড়া জীবন অসম্ভবের কাছাকাছি। অফিস হোক বা ক্লাসরুম, বিনোদন হোক বা সামাজিক যোগাযোগ, ইন্টারনেট প্রতিনিয়ত আমাদের সঙ্গে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু এই জগৎকে অনবদ্য গতিতে এবং নির্ভুলভাবে চালানোর পেছনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কথা আমরা অনেক সময় বুঝি না। চলুন, গভীরভাবে জেনে নেই কীভাবে ইন্টারনেট কাজ করে এবং কেন এটি আমাদের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ।
ইন্টারনেটের কাঠামো:
ইন্টারনেট বলতে আমরা বোঝি একাধিক কম্পিউটার এবং ডিভাইসের আন্তঃসংযোগের বিশাল নেটওয়ার্ক। এর মূল ভিত্তি হল ফাইবার অপটিক কেবল, যা আলোর গতিতে তথ্য পরিবহন করে। এই কেবলগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে, বিশেষ করে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে হাজার হাজার মাইল লম্বা সাবমেরিন কেবল। এর মাধ্যমে হাজার হাজার গিগাবিট ডেটা প্রতি সেকেন্ডে স্থানান্তরিত হয়।
এছাড়া স্যাটেলাইট, মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ওয়াইফাই বিভিন্ন মাধ্যমের মাধ্যমে ইন্টারনেট সিগন্যাল পৌঁছায় গ্রাহকের কাছে।
তথ্যের যাত্রাপথ: প্যাকেট সুইচিং
যখন আপনি কোনো ওয়েবসাইট খুলতে চান বা মেইল পাঠান, সেই তথ্য "প্যাকেট" নামে ছোট ছোট টুকরোতে ভাগ হয়ে যায়। প্রতিটি প্যাকেটে থাকে তথ্যের অংশ, প্রেরক এবং গন্তব্যের ঠিকানা। এই প্যাকেটগুলো ইন্টারনেটের বিভিন্ন রাউটার ও সার্ভারের মধ্য দিয়ে ছুটে যায়, একদম ভিন্ন ভিন্ন পথে।
এর পর গন্তব্যে এসে প্যাকেটগুলো আবার একত্রিত হয়ে মূল তথ্য তৈরি করে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় প্যাকেট সুইচিং। এর জন্য দায়িত্বে থাকে TCP/IP (Transmission Control Protocol/Internet Protocol), যা ডেটার সম্পূর্ণতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
নাম ও ঠিকানা: DNS এর ভূমিকা
ইন্টারনেটে প্রতিটি ওয়েবসাইটের একটি সংখ্যা বা আইপি (IP) ঠিকানা থাকে, যেমন 192.168.1.1। কিন্তু ব্যবহারকারীরা সহজে মনে রাখতে পারে না এসব সংখ্যার সমাহার। তাই DNS (Domain Name System) কাজ করে ওয়েবসাইটের নামকে সেই আইপি ঠিকানায় রূপান্তরিত করার মাধ্যমে আপনাকে দ্রুত ও সঠিক সার্ভারে পৌঁছে দেয়।
বিশাল ডেটা সেন্টার ও ক্লাউড
ইন্টারনেটে তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনার জন্য বিশাল ডেটা সেন্টার তৈরি করা হয়েছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ সার্ভার ২৪ ঘণ্টা চলমান থাকে। এখানে থাকে আপনার তথ্য, ছবি, ভিডিও, ওয়েবসাইটের ডেটা — যা ক্লাউড প্রযুক্তির মাধ্যমে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে অ্যাক্সেস করা যায়।
ইন্টারনেটের গতিপথ:
ফাইবার অপটিক কেবলের আলোর গতির কারণে তথ্য দ্রুত চলতে পারে, যা প্রায় ৩০০,০০০ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড। এর ফলে কয়েক হাজার মাইল দূরের সার্ভার থেকেও তথ্য মিলিসেকেন্ডে আসতে পারে।
তথ্যের পরিমাণ ও গুরুত্ব
বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন প্রায় ৪৫ জেটাবাইট (১ জেটাবাইট = এক বিলিয়ন টেরাবাইট) তথ্য ইন্টারনেটে প্রবাহিত হয়। এ তথ্যের বড় অংশ আসে ভিডিও স্ট্রিমিং, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন শপিং, ডিজিটাল শিক্ষা, এবং অফিস কাজ থেকে।
নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ
ইন্টারনেটের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার ঝুঁকিও বেড়েছে। সাইবার হামলা, হ্যাকিং, ফিশিং, মালওয়্যার ইত্যাদি ঘটনা দিনে দিনে বাড়ছে। তথ্য চুরি এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াইতে এনক্রিপশন, মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, ফায়ারওয়াল এবং আধুনিক সাইবার সিকিউরিটি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ: কোয়ান্টাম ইন্টারনেট ও ৬জি
নতুন প্রযুক্তি কোয়ান্টাম ইন্টারনেট আসতে চলেছে, যা কোয়ান্টাম এনক্রিপশনের মাধ্যমে তথ্য নিরাপত্তাকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে। এছাড়া ৬জি প্রযুক্তি ইন্টারনেটের গতি, ক্ষমতা ও সংযোগের সক্ষমতা বহুগুণ বাড়াবে, যা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও আইওটি ডিভাইসের বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
ইন্টারনেটের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
ইন্টারনেট কেবল একটি প্রযুক্তি নয়; এটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষার বিস্তার, সামাজিক যোগাযোগ ও বৈশ্বিক সমন্বয়ের প্রধান মাধ্যম। ব্যবসা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক আন্দোলন, প্রতিটি ক্ষেত্রে এর অবদান অপরিসীম।
ইন্টারনেট হল এক বিশাল, জটিল ও গতিশীল তথ্য যন্ত্র, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সম্পূর্ণ নতুন রূপ দিয়েছে। এটি প্রযুক্তির শীর্ষ স্থানে দাঁড়িয়ে বিশ্বকে এককভাবে যুক্ত করে, তথ্যের অটুট সেতুবন্ধন গড়ে তোলে। তাই এর কাজের প্রক্রিয়া বোঝা, সচেতন ব্যবহার এবং নিরাপত্তার প্রতি যত্নবান হওয়া সময়ের দাবি।