নাভির যত্নে তেল: মনের প্রশান্তি ও ত্বকের পুষ্টির সংযোগস্থল

নাভির যত্নে তেল: মনের প্রশান্তি ও ত্বকের পুষ্টির সংযোগস্থল
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

অনেকেই ভাবেন, নাভিতে তেল লাগানো নিছক প্রাচীন এক কুসংস্কার। কিন্তু আধুনিক শরীরতত্ত্ব, স্নায়ুবিজ্ঞান ও চর্মবিদ্যার আলোকে এই চর্চাটিকে দেখা হচ্ছে নতুন চোখে। হাজার বছর পুরনো এই অভ্যাসটি এখন আলোচনায় আসছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে-

নাভিতে তেল লাগানো কি সত্যিই উপকারী? নাকি শুধুই লোকজ সংস্কারের ছায়া?
 

নাভি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

নাভি আমাদের দেহের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে গর্ভাবস্থায় শরীরের পুষ্টি গ্রহণের সংযোগ ছিল। জন্মের পর এটি নিষ্ক্রিয় হলেও, নাভি অঞ্চলটি আশেপাশে রয়েছে উচ্চমাত্রার স্নায়ু সংবেদনশীলতা এবং কিছু লসিকা ও রক্তনালীর জটিল নেটওয়ার্ক। ফলে এখানে সামান্য স্পর্শ, উষ্ণতা বা সুগন্ধযুক্ত প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার দেহে হালকা স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা মানসিক প্রশান্তি এবং ত্বকের যত্নে ভূমিকা রাখতে পারে।
 

কোন তেল কী উপকারে আসে?

১।  তিলের তেল (Sesame Oil)

- উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানে সমৃদ্ধ

- শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়ক

- রাতে ঘুমের আগ মুহূর্তে ব্যবহারে স্নায়বিক শিথিলতা দিতে পারে
 

২।  নারকেল তেল

⇨ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাংগাল উপাদানসমৃদ্ধ

⇨ শুষ্ক বা ফাটা ত্বকে নাভির মাধ্যমে ব্যবহার করলে

⇨ মুখ, ঠোঁট ও পেটের চামড়া নরম ও স্নিগ্ধ হতে পারে
 

৩।  সরিষার তেল

- উত্তপ্ত প্রকৃতির এই তেল শীতে দেহে উষ্ণতা তৈরি করে

- ঠান্ডাজনিত কাশি বা নাক বন্ধের সমস্যায় নাভিতে
- সরিষার তেল হালকা উষ্ণ করে লাগালে আরাম পাওয়া যায়
 

৪। জোজোবা ও অলিভ অয়েল

- হাইপোঅ্যালারজেনিক প্রকৃতির, সংবেদনশীল ত্বকের জন্য নিরাপদ

- গভীরভাবে ত্বকে প্রবেশ করে আর্দ্রতা বজায় রাখে
 

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি

নাভি থেকে তেল শোষণের সরাসরি পদ্ধতি না থাকলেও, স্নায়ুসমৃদ্ধ এই এলাকায় প্রাকৃতিক তেল ম্যাসাজ করার ফলে দেহের 'parasympathetic nervous system' সক্রিয় হতে পারে, যা ঘুম ও বিশ্রামপ্রবণ অবস্থায় সহায়তা করে। বিশেষ করে ঘুমের আগে হালকা গরম তেল দিয়ে নাভি ম্যাসাজ মানসিক প্রশান্তি ও ঘুমের গভীরতা বাড়াতে পারে বলে কিছু নিউরোসায়েন্স-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে।
 

লোকজ সংস্কৃতি বনাম আধুনিক সচেতনতা

বাংলা, ভারতীয়, মধ্যপ্রাচ্য এবং পূর্ব এশিয়ার বহু সংস্কৃতিতে নাভিতে তেল ব্যবহার একটি ঘরোয়া উপায় হিসেবে পরিচিত। যদিও বিজ্ঞানের ভাষায় এটি অলৌকিক কিছু নয়, তবে প্রাকৃতিক যত্ন ও আত্মসচেতনতার যুগে এই পদ্ধতি আবারও গুরুত্ব পাচ্ছে। অযথা ওষুধ নির্ভরতা ছাড়াই শরীরের সঙ্গে সংযোগ তৈরির এক সরল অথচ শক্তিশালী উপায় হিসেবে অনেকে এটিকে নিচ্ছেন দৈনন্দিন রুটিনে।
 

সতর্কতা ও ব্যবহারবিধি

- অতিরিক্ত বা সস্তা মানের সুগন্ধযুক্ত তেল ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত

- সংবেদনশীল বা অ্যালার্জি-প্রবণ ত্বকে আগে পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি

- শিশুদের ক্ষেত্রে এই চর্চা শুরু করার আগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো
 

নাভিতে তেল লাগানো নিছক একটা রিচুয়াল নয়, বরং এটি হতে পারে আত্ম-যত্নের সহজ একটি মাধ্যম। আধুনিক বিজ্ঞান হয়তো এখনো একে পুরোপুরি "চিকিৎসা" হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, তবে আত্মপ্রশান্তি, ত্বকের যত্ন, ঘুম এবং মানসিক ভারসাম্যের এক প্রাকৃতিক পথ হিসেবে এর ব্যবহার অনেকেই আবার গ্রহণ করছেন। বিজ্ঞানের আলো ও সচেতনতার মিশ্রণে, এই চর্চা ফিরে পাচ্ছে নতুন মানে।
 

তথ্যসূত্র: নিউরোফিজিওলজি, স্কিন অ্যাবজর্পশন স্টাডিজ, ন্যাচারাল মেডিসিন রিপোর্টস (পাবলিক ওপেন অ্যাকসেস রিসোর্স)


সম্পর্কিত নিউজ