আত্মহত্যার গভীর কারণ ও বৈজ্ঞানিক মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সাম্প্রতিক তথ্যমতে, প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যায় মারা যান, যা প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন প্রাণ হারানোর সমান। এই ভয়াবহ পরিসংখ্যানের পেছনে একাধিক জটিল মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণ লুকিয়ে রয়েছে।
আত্মহত্যা কোনো হঠাৎ সিদ্ধান্ত নয়; এটি প্রায়শই একটি দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সংকটের শেষ পর্যায়। বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে উচ্চ পরিমাণে উদ্বেগ, হতাশা ও মানসিক চাপ লক্ষ্য করা যায়, যা প্রায়শই অবহেলা ও সমর্থনের অভাবে আত্মঘাতী চিন্তায় রূপ নেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যার মূল কারণগুলোকে কয়েকটি বড় ভাগে ভাগ করা যায়-মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, পারিবারিক ও সামাজিক সংকট, আর্থিক দুর্দশা, ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে অনিশ্চয়তা।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে, মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যের বিঘ্ন-বিশেষ করে সেরোটোনিন ও ডোপামিনের অনুপস্থিতি-বিষণ্নতা ও আত্মঘাতী প্রবণতার অন্যতম কারণ।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ মস্তিষ্কের নিউরোলজিক্যাল কাঠামোকে প্রভাবিত করে, যা মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সংকট মোকাবেলার দক্ষতা কমিয়ে দেয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শৈশব বা কৈশোরে মানসিক ট্রমার সম্মুখীন হয়েছেন, তারা আত্মহত্যার ঝুঁকিতে বেশি পড়েন।
সামাজিক পরিবেশও এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাকীত্ব, বিচ্ছিন্নতা, পারিবারিক সহিংসতা বা মানসিক অসুস্থতার প্রতি কলঙ্ক এসব কারণ আত্মহত্যার প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করে। বিশেষ করে যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্যতা কম, সেখানে অনেকেই নিজেদের সমস্যাগুলো গোপন রাখেন এবং সহায়তা নিতে সংকোচবোধ করেন।
সুন্দর খবর হলো, সমগ্র বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে আত্মহত্যা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে। বাংলাদেশেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচার বৃদ্ধি, হটলাইন সেবা এবং বিদ্যালয়-কলেজ পর্যায়ে কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মানসিক স্বাস্থ্যকে স্বাভাবিক জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করলে, আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
পরিবার ও সমাজের প্রতি আহ্বান, মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করা মানুষগুলোর প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি করুন, তাদের কথা শোনার জন্য সময় দিন, এবং প্রয়োজনে পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। একটি সহানুভূতিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করাই আত্মহত্যা প্রতিরোধের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।
আত্মহত্যা একটি জটিল ও বহুমাত্রিক বিষয়। এটি শুধু ব্যক্তিরই নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি সংকেত যে-মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সহায়তার ব্যবস্থা আরও প্রয়োজন। মননের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, দরকার সহানুভূতি, সচেতনতা এবং বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ। আর তবেই আমরা একটি সুস্থ, সচেতন ও সহমর্মী সমাজ গড়ে তুলতে পারব।