উদ্ভিদের ডিএনএ ও বংশগতির বৈজ্ঞানিক রহস্য

উদ্ভিদের ডিএনএ ও বংশগতির বৈজ্ঞানিক রহস্য
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিজ্ঞান যতই অগ্রসর হচ্ছে, ততই প্রকৃতির গভীরে লুকিয়ে থাকা জটিলতা উন্মোচিত হচ্ছে। আজ আমরা জানি, মানুষ যেমন ডিএনএ বা জিনগত উপাদানের মাধ্যমে তার রূপ, রঙ, রোগপ্রবণতা এমনকি আচরণগত বৈশিষ্ট্য পায়-তেমনই গাছেরও রয়েছে নিজস্ব জিনগত কোড, যেটা তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয় জন্মের আগেই।

একটি আম গাছ কি ল্যাংড়া হবে, না হিমসাগর? একটি ধানের জাত কি খরা সহনশীল হবে, না মাত্রাতিরিক্ত পানিতে নষ্ট হয়ে যাবে—এসব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে গাছের ডিএনএ-তে।
 

ডিএনএ-গাছের বংশগতির মূল চাবিকাঠি

গাছের প্রতিটি কোষে থাকে নিউক্লিয়াস, আর সেই নিউক্লিয়াসে সংরক্ষিত থাকে ডিএনএ—ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড। এই ডিএনএ-তে থাকে হাজার হাজার জিন, যেগুলো নির্ধারণ করে গাছটির পাতা কেমন হবে, কখন ফুল ফোটাবে, কী গন্ধ ছড়াবে, কিংবা কী ধরনের আবহাওয়ায় ভালোভাবে বেড়ে উঠবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উদ্ভিদের জিনোম বিশ্লেষণ করে কৃষিবিদরা এখন আগামই বুঝতে পারছেন, কোন জাতটি খরা প্রতিরোধ করতে পারবে বা কোনটি ক্ষতিকর পোকামাকড়ের আক্রমণ এড়াতে পারবে।
 

বংশগতির ধারায় কীভাবে এগোয় গাছ?

একটি গাছ যখন বীজ ছড়ায়, সেই বীজে তার সব জেনেটিক তথ্য পৌঁছে যায় পরবর্তী প্রজন্মে। তবে শুধু পিতা-মাতার গুণ নয়, কখনো কখনো পরিবেশের সাথে অভিযোজনের জন্য কিছু জিনের কার্যকলাপ বদলাতে পারে—একে বলে 'জিন এক্সপ্রেশন'। অর্থাৎ একই প্রজাতির গাছও ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন আচরণ করতে পারে।

এখন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা 'জিন এডিটিং' প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট জিন বদলে উন্নত প্রজাতি তৈরি করছেন। যেমন ধান বা গমের এমন জাত তৈরি হচ্ছে, যেগুলো একদিকে কম পানি চায়, আবার অন্যদিকে রোগ প্রতিরোধীও।
 

উদ্ভিদের জিন অধ্যয়ন-  জেনেটিক গবেষণা এখন কৃষি বিপ্লবের নতুন দিক উন্মোচন করছে। যেসব অঞ্চলে খরা, লবণাক্ততা বা অতিরিক্ত গরম সমস্যা তৈরি করছে, সেখানে এমন গাছ তৈরি হচ্ছে যেগুলো সেই পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম। ফলে কৃষকরা যেমন বেশি ফসল পাচ্ছেন, তেমনই পরিবেশগত টেকসইতাও বজায় থাকছে।

উদ্ভিদ জিনোম নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীদের গবেষণা স্পষ্ট করে দিচ্ছে—গাছ শুধু জীবন দেয় না, তাদের ভেতরে রয়েছে এক বিশাল 'জিনগত জগৎ', যা এখনো অনেকাংশেই মানুষের অজানা।

উদ্ভিদের ডিএনএ ও বংশগত বৈশিষ্ট্য এখন শুধু গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি হয়ে উঠছে খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ কৃষির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। প্রকৃতির এই নিখুঁত প্রোগ্রামিং বুঝে নিতে পারলে আমরা হয়তো আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে পারব।


সম্পর্কিত নিউজ