ডিজিটাল দুনিয়ায় শিশুরা: প্রযুক্তির বন্ধু, না অদৃশ্য বিপদ?

ডিজিটাল দুনিয়ায় শিশুরা: প্রযুক্তির বন্ধু, না অদৃশ্য বিপদ?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিশ্ব আজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করেছে, আর সেই পরিবর্তনের মাঝেই শিশুরা বড় হচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটার স্ক্রিনের সঙ্গে তাদের পরিচয় হচ্ছে দ্রুত। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এই প্রযুক্তির নিত্যনতুন ব্যবহার কি তাদের বিকাশে সহায়ক, নাকি এক ধরনের অদৃশ্য হুমকি?

শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ সবচেয়ে দ্রুত ঘটে প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে। এই সময়ের অভিজ্ঞতা ও পরিবেশ শিশুর ভবিষ্যত মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক এবং শারীরিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রযুক্তির সুফল যেমন রয়েছে, তেমনই এর অপব্যবহার শিশুর উন্নয়নকে ব্যাহত করতে পারে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের সামনে বসে থাকা শিশুদের ক্ষেত্রে দৃষ্টি সমস্যার পাশাপাশি মনোযোগের কমতি, ঘুমের ব্যাঘাত এবং সামাজিক যোগাযোগে দুর্বলতার প্রবণতা বেড়েছে। 

এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা দিনে ২ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা বেশি দেখা যায়।

অন্যদিকে, সঠিক ও সীমিত ব্যবহারে প্রযুক্তি শিশুদের শেখার পথ সুগম করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, বাচ্চাদের বুদ্ধি ও ভাষা বিকাশে ইন্টারঅ্যাকটিভ শিক্ষামূলক অ্যাপস, বিভিন্ন বিজ্ঞান-ভিত্তিক অ্যানিমেশন, কল্পনাপ্রসূত গল্প ও সৃজনশীল গেমস সহায়ক ভূমিকা রাখে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির সঙ্গে শিশুদের বাস্তব অভিজ্ঞতা যেমন খেলা, প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ এবং ব্যক্তিগত মিথস্ক্রিয়া মিলিয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি।

বিশেষ করে পিতামাতাদের উচিত শিশুদের স্ক্রিন টাইম সীমাবদ্ধ রাখা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, ২ বছরের নিচে শিশুদের জন্য কোনো ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহার মোটেই সুপারিশ করা হয় না। ২ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা দিনে স্ক্রিন টাইম অনুমোদন করা হয়েছে, যা অবশ্যই অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে হওয়া প্রয়োজন।

এছাড়া, প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের উচিত শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানো, ডিজিটাল কন্টেন্ট বাছাই করা এবং তাদের শেখানো কীভাবে অনলাইন ঝুঁকি এড়ানো যায়। শিশুদের কেবল প্রযুক্তির ভক্ত বানানো নয়, বরং তাদের ডিজিটাল সুশিক্ষা দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

সার্বিকভাবে বলা যায়, প্রযুক্তি নিজের স্থানে একটি অসাধারণ শিক্ষণ এবং বিনোদন সরঞ্জাম হতে পারে, তবে এটি শিশুর জীবনের একমাত্র অভিজ্ঞতা হয়ে উঠলে তার বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণই শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশের মূল চাবিকাঠি।

প্রযুক্তি বাচ্চাদের জন্য বন্ধু হতে পারে, যদি আমরা হই দিকনির্দেশক, নয়তো বিপজ্জনক দুঃসাহসী। সন্তানের জীবন ও ভবিষ্যতের জন্য প্রযুক্তির সঙ্গে সচেতন সম্পর্ক গড়ে তোলাই এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।


সম্পর্কিত নিউজ