বাংলাদেশ বাতিল করল ভারতের বিদ্যুৎ করিডোর প্রকল্প

জাতীয় স্বার্থে নেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশ বাতিল করল ভারতের বিদ্যুৎ করিডোর প্রকল্প
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাংলাদেশ সরকার ভারতের প্রস্তাবিত ১১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ করিডোর প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক ও বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞরা।

প্রকল্পটির আওতায় পার্বতীপুর থেকে ভারতের মেঘালয়ের বোরানগর এবং বিহারের কাটিহার পর্যন্ত ৭৬৫ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৮ হাজার মেগাওয়াট এবং সর্বোচ্চ চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াটের আশপাশে, তাই অতিরিক্ত বিদ্যুতের প্রয়োজনে এই প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।


কারণ যা উঠে এসেছে:

জাতীয় গ্রিড নিরাপত্তা: প্রকৌশলীরা আশঙ্কা করছেন, দুই দেশের গ্রিড যুক্ত হলে একপক্ষের বিভ্রাট অন্যপক্ষকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে ব্ল্যাকআউটের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

অর্থনৈতিক বোঝা: এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য এত বড় অবকাঠামো নির্মাণে বিদেশি ঋণ বাড়বে, যা দেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করবে।

পরিবেশগত ঝুঁকি: ব্রহ্মপুত্রের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা থাকায় নদীপ্রবাহ কমে যেতে পারে। এতে নদীভাঙন, কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব এবং জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


বিশেষজ্ঞদের মত:

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, “মাত্র এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য এত বিশাল ঝুঁকি নেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। প্রকল্প অনুমোদনের আগে জনগণের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতা জরুরি।”

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান বলেন, “জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে করিডোর প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও পর্যালোচনা করা হবে।”

বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এর বাইরে সম্প্রতি নেপাল থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়েছে, তবে সেখানে ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার হলেও কোনো আলাদা করিডোর ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়েনি।


সিদ্ধান্তের তাৎপর্য:

এই প্রকল্প বাতিলের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সুরক্ষাই নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে মুখ্য। বিদ্যুৎ খাতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আরও স্বচ্ছতা, গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।


সম্পর্কিত নিউজ