ছোট গ্রামের বড় স্বপ্নপূরণ: শিক্ষক বাবার ছয় সন্তানই ঢাবিতে

ছোট গ্রামের বড় স্বপ্নপূরণ: শিক্ষক বাবার ছয় সন্তানই ঢাবিতে
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার এক প্রান্তিক শিক্ষক পরিবারের গল্প আজ দেশের মানুষের মনে আলোড়ন তুলেছে। শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী শামীমা বেগম-দুজনেই এক অভাবনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁদের ছয় সন্তানই এখন দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

সাম্প্রতিক শিক্ষাবর্ষে (২০২৫-২৬) ছায়েদ উল্লাহর ছোট ছেলে আরাফাত হোসেন ‘এ’ ইউনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ইতিহাস গড়েছেন পরিবারের হয়ে। এর মাধ্যমে তাঁদের পরিবারে মোট ছয় ভাইবোনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার অনন্য গৌরব অর্জন করলেন।

এই বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে আছে কঠোর পরিশ্রম, আত্মত্যাগ এবং শিক্ষার প্রতি অসীম শ্রদ্ধা। শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ জানান, “৩০ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। সৎভাবে রোজগার করে সন্তানদের পড়াশোনার জন্য জমিজমা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। কিন্তু এতটুকু অনুশোচনা নেই। বরং গর্ব হয়, সন্তানরা আমার শ্রম ও মায়ের ভালোবাসাকে সার্থক করেছে।”

ছায়েদ উল্লাহর সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছেলে শামসুল আলম দিপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

দ্বিতীয় ছেলে শাজাহান সিরাজ আল মামুন লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে বর্তমানে কর্মসংস্থান ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার।
তৃতীয় ছেলে আশরাফুল ইসলাম শহীদ বর্তমানে কৃষি ব্যাংকে কর্মরত, পড়েছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে।
চতুর্থ ছেলে শরীফুল ইসলাম বিজয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করে এখন বিসিএস প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।
একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বর্তমানে ওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্ট্যাডিজ বিভাগে অধ্যয়নরত।
আর সবচেয়ে ছোট, সদ্য ভর্তি হওয়া ছেলে আরাফাত হোসেন এখন ঢাবির নতুন শিক্ষার্থী।

স্থানীয় উদয়ন আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, “একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এমনভাবে ছয় সন্তানকে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলে আনবেন-এটা এককথায় অভাবনীয়। কমলনগরবাসীর জন্য এটা গর্বের বিষয়।”

ছায়েদ উল্লাহর এই অনন্য দৃষ্টান্ত শুধু একজন পিতার নয়, এটি একজন শিক্ষকের দায়বদ্ধতা, দায়িত্বশীলতা ও আত্মত্যাগের মূর্ত প্রতীক হয়ে সমাজে আলো ছড়াচ্ছে।


সম্পর্কিত নিউজ