প্রযুক্তির স্টিয়ারে ভবিষ্যতের যাত্রা

প্রযুক্তির স্টিয়ারে ভবিষ্যতের যাত্রা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

পরিবহন ব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে নতুন এক যুগে প্রবেশ করছে-যেখানে গাড়ির চাকা ঘুরলেও চালকের আসন থাকবে ফাঁকা। সেলফ-ড্রাইভিং কার বা স্বয়ংক্রিয় গাড়ির মতো উদ্ভাবন শুধু আর প্রযুক্তির জাদুঘরে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাস্তবের রাস্তায় নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাপী পরিবহনখাতে এই পরিবর্তনকে 'চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের রাস্তাঘাট সংস্করণ' বলেও বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা।

কীভাবে কাজ করে সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ি?

একটি সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ি মূলত কয়েকটি মূল প্রযুক্তির সমন্বয়ে কাজ করে:

⇨ LiDAR (Light Detection and Ranging): ৩৬০ ডিগ্রি স্ক্যান করে আশপাশের অবজেক্ট শনাক্ত করে।

⇨ ক্যামেরা ও রাডার সেন্সর: ট্রাফিক সাইন, গতি, অবজেক্ট ডিস্ট্যান্স, মানুষ ও অন্যান্য গাড়ি শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।

⇨ AI অ্যালগরিদম ও ডিপ লার্নিং: পরিবেশ বিশ্লেষণ করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়-যেমন কখন ব্রেক করবে, কখন বাঁক নেবে বা থামবে।

⇨ HD ম্যাপিং ও GPS সিস্টেম: নিখুঁত রুট প্ল্যান তৈরি করে গাড়ির চলাচলকে নিরবিচারে চালিয়ে যায়।
 

স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট মানে শুধুই সেলফ-ড্রাইভিং নয়

ভবিষ্যতের শহরগুলোতে শুধু চালকবিহীন গাড়ি থাকলেই হবে না, বরং পুরো সড়ক অবকাঠামোই হবে "স্মার্ট"। এতে থাকবে:

⇨ ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (ITS): সেন্সরের মাধ্যমে ট্রাফিক সিগনাল নিয়ন্ত্রণ, ভিড়ের পূর্বাভাস এবং স্বয়ংক্রিয় ডাইভারশন ব্যবস্থাপনা।

⇨ V2V (Vehicle-to-Vehicle) যোগাযোগ: এক গাড়ি অন্য গাড়িকে তার অবস্থান ও গতি জানিয়ে সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়ায়।

⇨ V2I (Vehicle-to-Infrastructure) প্রযুক্তি: রোড সাইন, সিগনাল ও ট্রাফিক সিস্টেমের সঙ্গে গাড়ির স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ স্থাপন করে।
 

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই রূপান্তর?

⇨ দুর্ঘটনা কমবে: চালকের ভুল বা ক্লান্তি থেকে ঘটানো দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।

⇨ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে: সেন্সর ও ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে শহরের যানজট অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

⇨ জ্বালানি ও সময় সাশ্রয়: স্বয়ংক্রিয় গতির নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক রুট নির্বাচনের মাধ্যমে জ্বালানি খরচ ও যাত্রা সময় কমবে।

⇨ দূষণ হ্রাস: বৈদ্যুতিক ও স্মার্ট যানবাহন ব্যবহারে শব্দ ও কার্বন নিঃসরণ উভয়ই কমবে।
 

চ্যালেঞ্জ এখনও কাটেনি

এই প্রযুক্তির বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হলো আইনগত কাঠামোর অনুপস্থিতি, জনমানুষের আস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি। একটি গাড়ি যখন ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা, ডেটা গোপনীয়তা আইন ও নিরাপত্তা স্ট্যান্ডার্ডও এখনও উন্নয়নাধীন।
 

ভবিষ্যতের দিগন্ত

বিশ্বের অনেক বড় প্রযুক্তি ও অটোমোবাইল কোম্পানি ইতিমধ্যেই সফলভাবে সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ির প্রোটোটাইপ চালু করেছে। অদূর ভবিষ্যতে শহরের রাস্তায় এমন দৃশ্য দেখা নতুন কিছু হবে না-যেখানে গাড়ি নিজেই যাত্রীকে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে, অথচ কেউ স্টিয়ারিংয়ে নেই।
 

যানবাহনের ভবিষ্যৎ আর মানুষনির্ভর নয়, বরং ডেটা, সেন্সর আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভরশীল। নিরাপত্তা, দক্ষতা ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে হলে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। সময় খুব একটা বেশি নেই-কারণ ভবিষ্যতের সড়ক এসে গেছে আমাদের দরজায়, শুধু দরজা খুলে দেওয়ার অপেক্ষা।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ