মহাকাশে পা ফেলার পেছনে লুকিয়ে থাকা রকেটের জটিল নকশা ও প্রযুক্তির বিস্ময়

মহাকাশে পা ফেলার পেছনে লুকিয়ে থাকা রকেটের জটিল নকশা ও প্রযুক্তির বিস্ময়
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মহাকাশ অভিযানের সফলতা নির্ভর করে রকেটের নকশা ও প্রযুক্তির নিখুঁত সংমিশ্রণে। রকেট ডিজাইন কোনো সাধারণ যান্ত্রিক গঠন নয়, বরং এটি পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম, আধুনিক প্রযুক্তি, এবং নান্দনিকতার এক চমৎকার সমন্বয়, যা মানব সভ্যতাকে সীমানার বাইরে নিয়ে যায়।

রকেটের নান্দনিকতা:  প্রথম দৃষ্টিতে রকেটের লম্বাটে আকৃতি কিংবা তার মসৃণ পৃষ্ঠতল মনে হতে পারে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তার প্রতিফলন। কিন্তু বাস্তবে, এর প্রতিটি অংশের ডিজাইন অ্যারোডাইনামিক্সের কঠোর নিয়ম মেনে তৈরি, যা বায়ুরোধকে কমিয়ে জ্বালানির অপচয় রোধ করে। উদাহরণস্বরূপ, রকেটের নাকাবৃত্তি বা 'নজেল' এমনভাবে গঠন করা হয় যাতে বাতাসের প্রবাহ সহজ হয় এবং যান্ত্রিক চাপ কমে।

এছাড়াও, রকেটের বহিরাগত পৃষ্ঠে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের তাপ প্রতিরোধী লেপ ও রঙ নির্বাচনের পিছনে রয়েছে একাধিক বৈজ্ঞানিক কারণ। এটি শুধু রকেটকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ও মহাকাশের চরম তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করে না, বরং রকেটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
 

ওজন, তাপ, গতি ও নিরাপত্তার জটিল সমীকরণ- রকেটকে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিক্রম করার জন্য ১১.২ কিমি/সেকেন্ড (প্রায় ৪০,৩২০ কিমি/ঘণ্টা) গতি অর্জন করতে হয়। এই উচ্চ গতিতে রকেটের কাঠামোতে প্রচুর চাপ ও তাপ সৃষ্টি হয়, যা সামাল দিতে সক্ষম উপকরণ ব্যবহার করা জরুরি। আধুনিক রকেটে কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল যেমন কার্বন ফাইবার ও টাইটেনিয়াম সমন্বিত হালকা ও শক্তিশালী মেটালালয় ব্যবহৃত হয়।

তাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য 'থার্মাল ইনসুলেশন' ও 'হিট শিল্ড' প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় রকেটের অংশগুলোতে অসাধারণ তাপ সৃষ্টি হয়, যা রকেটের গঠনকে নষ্ট করে ফেলতে পারে। তাই, রকেটের বিশেষ অংশগুলোতে ইনটেনস তাপ সহ্য করতে সক্ষম উপকরণ এবং কুলিং সিস্টেম বসানো হয়।
 

নকশার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা:  রকেটের ডিজাইন এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে সিস্টেমের ব্যর্থতা হ্রাস পায়। 

উদাহরণস্বরূপ, একাধিক ইঞ্জিনের ব্যাবস্থা যাতে এক বা কয়েকটি ইঞ্জিন ব্যর্থ হলেও রকেট চলতে পারে। এছাড়া, কেবিনের গোলাকার ডিজাইন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় উত্তেজনা কমায়, যা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

এছাড়া, রকেটের বিভিন্ন সেন্সর ও কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম তাকে বাস্তব সময়ে পারফরম্যান্স অ্যানালাইসিস ও অ্যাডজাস্টমেন্টের সুযোগ দেয়। প্রযুক্তির এই আধুনিক অবদান রকেটের যাত্রাকে করে তুলেছে বহুগুণ নিরাপদ ও সফল।
 

ভবিষ্যৎ রকেট ডিজাইন: সম্প্রতি, স্পেসএক্সের Starship এবং ব্লু অরিজিনের New Glenn-এর মত প্রজেক্টগুলো রকেট ডিজাইনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট ডিজাইন কার্যকর অর্থনীতি ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও, ভবিষ্যতের রকেট ডিজাইনে উন্নত এআই ও অটোমেশন প্রযুক্তির সাহায্যে রকেট নিজে তার গঠন ও পরিচালনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করতে পারবে। এর ফলে রকেটের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমবে।

রকেট ডিজাইন মানেই শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, এটি এক গভীর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এবং নান্দনিক চিন্তার সম্মিলন। প্রতিটি উৎক্ষেপণ আমাদেরকে মহাবিশ্বের আরও কাছে নিয়ে যায়, যেখানে প্রযুক্তির সীমা ও মানুষের কল্পনার সীমানা মিলে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।


সম্পর্কিত নিউজ